মাসিক নিয়ে অসচেতনতা ও ট্যাবু ভাঙা জরুরি

বক্তারা নারী কর্মীদের মাসিক ব্যবস্থাপনায় কারখানা কর্তৃপক্ষকে বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

প্রতীকী ছবি

মাসিক নিয়ে অসচেতনতা ও ট্যাবুর কারণে পোশাক কারখানার নারী কর্মীরা দীর্ঘমেয়াদি প্রজনন স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েন। বেশির ভাগই স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। ফলে যথাযথ মাসিক ব্যবস্থাপনার অভাবে কারখানায় নারী কর্মীদের অনুপস্থিতি বাড়ে। কমে উৎপাদন।

গতকাল বুধবার এসএনভি–প্রথম আলোর যৌথ ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। তাঁরা নারী কর্মীদের মাসিক ব্যবস্থাপনায় কারখানা কর্তৃপক্ষকে ভর্তুকি বা বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ এবং সরকারি–বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন।

মেয়েরা পুরুষ সহকর্মীদের সামনে নিতে হবে বলে লজ্জায় স্যানিটারি ন্যাপকিন নিতেন না।
জেসমিন জামান, হেড অব মার্কেটিং, স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড

নেদারল্যান্ডস দূতাবাস পরিচালিত এসএনভি বাংলাদেশের ওয়ার্কিং উইথ ওমেন প্রকল্প-২ এবং প্রথম আলোর যৌথ উদ্যোগে ‘পোশাক শিল্পে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা’ শিরোনামের ছয় পর্বের ভার্চ্যুয়াল আলোচনা সভার দ্বিতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। এ পর্বে বক্তারা কথা বলেন পোশাক কারখানায় মাসিকের সময় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে। এর আগে প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ৮ অক্টোবর।

আলোচনায় অংশ নিয়ে রেনেসাঁ গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (মানবসম্পদ বিভাগ) সৈয়দা শায়লা আশরাফ বলেন, মাসিক নিয়ে আগে কখনো আলোচনাই করা হতো না। লক্ষ করা গেল, মেয়েরা নির্দিষ্ট সময়ে অসুস্থ হতে থাকেন এবং কারখানায় অনুপস্থিত থাকেন। এতে কারখানার উৎপাদন কমে যেত। মাসিক নিয়ে সচেতন করার জন্য তাঁরা নিজেদের কারখানায় প্রশিক্ষণ, বিনা মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার পদক্ষেপ নিয়েছেন।

এলা প্যাডের প্রতিষ্ঠাতা মামুনুর রহমান বলেন, মাসিক নিয়ে ট্যাবু ভাঙাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এলা প্যাড ঝুট দিয়ে স্বল্প মূল্যের স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটারি ন্যাপকিন বানাচ্ছে। সব কারখানায় স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে পোশাক কারখানার মালিকেরা বিনা মূল্যে বা স্বল্প মূল্যে তাঁদের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঝুট দিতে এগিয়ে আসতে পারেন।

ট্যাবুর বিষয়টি তুলে ধরে স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের হেড অব মার্কেটিং জেসমিন জামান বলেন, তাঁরা ২০১৬ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে তিনটি কারখানায় বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন রেখেছিলেন একটি জায়গায়। তবে মেয়েরা পুরুষ সহকর্মীদের সামনে নিতে হবে বলে লজ্জায় তা নিতেন না। এভাবে মাসিক ব্যবস্থাপনার অভাবে নারী কর্মীদের প্রজনন স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে।

অচান রিটেল ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক কমপ্লায়েন্স ব্যবস্থাপক সাইফুল আলম মল্লিক বলেন, ট্যাবু ভাঙা ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য তাঁরা নারীর পাশাপাশি পুরুষ সহকর্মীদেরও প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এই কর্মীরা একসময় মাসিক ব্যবস্থাপনার সুদূরপ্রসারী উপকারিতা উপলব্ধি করতে পারবেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলোর সহকারী সম্পাদক ফিরোজ চৌধুরী।