মুখে পরার মাস্ক ব্যাগেও নেই

ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে ভেতরে হাতড়ে মাস্ক খুঁজলেন। কিন্তু পেলেন না
ছবি: প্রথম আলো

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় রিকশায় করে যাচ্ছিলেন মামুন মাহমুদ ও আফরোজা আক্তার দম্পতি। দুজনের কারও মুখে মাস্ক নেই। ওই এলাকায় তখন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছিল। মাস্ক না থাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের রিকশা থামান।

মাস্ক পরেননি কেন? নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদের এমন প্রশ্ন শোনামাত্রই স্বামী মামুন মাহমুদ তাৎক্ষণিক পরনের ব্লেজারের পকেট থেকে মাস্ক বের করে পরেন।
পাশে বসে থাকা স্ত্রী আফরোজা জানালেন মাস্ক পরতে ভুলে গেছেন, তবে ব্যাগের ভেতরে মাস্ক আছে। এখনই পরে নেবেন। এই বলে ভ্যানিটি ব্যাগ খুলে ভেতরে হাতড়ে মাস্ক খুঁজলেন। কিন্তু পেলেন না।

আফরোজা আবার বললেন, ‘কাছেই আমার অফিস। তাড়াহুড়ো করে বেরোনোর সময় ভেবেছিলাম মাস্ক ব্যাগের মধ্যেই আছে। এখন দেখি নেই। হয়তো ভুল করে অফিসে ফেলে চলে আসছি।’ এই বলে রিকশা থেকে নেমে অফিসে যেতেও চাইলেন তিনি।

পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইশতিয়াক আহমেদ তাঁকে (আফরোজা আক্তার) ১০০ টাকা জরিমানা করেন ও একটি মাস্ক দেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে আজ শনিবার দুপুরে যমুনা ফিউচার পার্ক ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার আশপাশে ভ্রাম্যমাণ আদালত চালানো হয়। দুপুর পৌনে ১২টা থেকে বেলা পৌনে দুইটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা অভিযান পরিচালনা করা হয়।

অভিযানে মাস্ক না পরার কারণে ম্যাজিস্ট্রেট ছয়জনকে বিভিন্ন পরিমাণে মোট ৩ হাজার ৫০০ টাকা, ৬টি দোকানের মালিক ও ব্যবস্থাপককে মোট সাত হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ ছাড়া ভোক্তা অধিকার আইনে দুটি দোকানকে মোট ২২ হাজার (একটিকে ২ হাজার, অন্যটিকে ২০ হাজার) টাকা জরিমানা করা হয়।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন সামিউল ইসলাম। সামিউল মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন। কিন্তু মুখে মাস্ক ও মাথায় হেলমেট কোনোটাই ছিল না। তাঁকেও ভ্রাম্যমাণ আদালতের জেরার মুখে পড়তে হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট যখন মাস্ক না পরার কারণ জানতে চান, সামিউল তখন তাৎক্ষণিকভাবে পকেটে মাস্ক খুঁজছিলেন। না পেয়ে জানালেন, ‘স্যার আমার একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড হারিয়ে ফেলেছি। হন্যে হয়ে কার্ডটাই রাস্তা দিয়ে খুঁজছিলাম। মাস্ক পরার কথা মাথায় ছিল না।’

সামিউলকে ২০০ টাকা জরিমানা করা হয়
ছবি: প্রথম আলো

জবাব শুনে ম্যাজিস্ট্রেট সন্তুষ্ট হতে না পেরে সামিউলকে ২০০ টাকা জরিমানা করেন। এ ছাড়া তাঁর কাছে মোটরসাইকেল চালানোর ড্রাইভিং লাইসেন্সও ছিল না। তাই মোটরসাইকেলের চাবি জব্দ করে তাঁকে লাইসেন্স দেখিয়ে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

অভিযানে দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষের কাছেই মাস্ক আছে। কারও হাতে, কারও পকেটে, কেউ আবার মুখের মাস্ক কানে ঝুলিয়ে থুতনির নিচে নামিয়ে ঘুরছেন। রিকশাচালকেরা অনেকেই মাস্ক রিকশার হাতলে ঝুলিয়ে রেখেছেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করতে বলেন এবং পরবর্তী সময়ের জন্য সতর্ক করেন।