ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মোমবাতি হাতে তাঁরা

আলোতে, স্লোগানে জানানো হয় ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ
প্রথম আলো

তখন সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। রাজধানীর উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে জড়ো হচ্ছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিট। এবার শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে পড়লেন শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে। দেশের আনাচে–কানাচে বিভিন্ন সময় ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন সবাই। এরপর সবার হাতে উঠল মোমবাতি। চলল নীরব প্রতিবাদ।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ আর সিলেটের এমসি কলেজের তরুণী ধর্ষণসহ সারা দেশের ধর্ষণ–নিপীড়নের বিরুদ্ধে কয়েক দিন ধরে উত্তরায় লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধর্ষণের শিকার সব নারীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ধর্ষণের প্রতিবাদ জানাতে মোমবাতি প্রজ্বালন করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা জাতীয় সংগীত ও শপথবাক্য পাঠ করেন। পরে আলোতে, স্লোগানে জানানো হয় ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ।

আলোতে, স্লোগানে জানানো হয় ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ।
প্রথম আলো

মাইশা খান উত্তরার রাজউক থেকে এবার এইচএসসি পাস করেছেন। ধর্ষণের প্রতিবাদে আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই ছিলেন তিনি। কখনো গলাফাটা স্লোগান, কখনো বিদ্রোহী গান–কবিতায় মাতিয়ে রেখেছেন সবাইকে। কথা হলে তিনি বলেন, ‘নারী কোনো ভোগ্য পণ্য নয়, তাঁরাও সমাজের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, পুরুষের বেটার হাফ (অর্ধাঙ্গিনী)। কিন্তু সেই নারীকে সমাজে নির্যাতন–নিপীড়নের শিকার হতে দেখলে খুব খারাপ লাগে, লজ্জা পাই। তাই নিজের ইচ্ছা থেকেই আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে সঙ্গে ছিলাম। এ ব্যাপারে আমার পরিবারও আমাকে সাপোর্ট দিয়েছে।’

আরেক শিক্ষার্থী সাদিকা আফরিন বলেন, ‘বর্তমান সমাজব্যবস্থায় ধর্ষণ ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। আবার এই ধর্ষণের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িত অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার বা আইনের ফাঁক গলে পার পেয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। তাই আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যেকোনো মূল্যে ধর্ষকের সাজা ফাঁসি কার্যকর করা। কারণ, নারীর জন্য একটা নিরাপদ সমাজ খুব দরকার।’

উত্তরায় ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের প্রথম দাবি ছিল ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি কার্যকর করা। এরই মধ্যে ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড করে একটি অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। এর বাইরে শিক্ষার্থীরা আরও ছয়টি দাবি উত্থাপন করেছিলেন। তবে বাকি দাবিগুলোর ব্যাপারে এখনো সরকার থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের একজন লাবিব মুহান্নাদ বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ধর্ষণের ব্যাপারে দেশবাসীকে জাগ্রত করা। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, আমরা এরই মধ্যে তা পেরেছি। আমাদের প্রথম দাবি ধর্ষকের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি, যা নিয়ে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। আশা করছি আমাদের বাকি দাবিগুলোও সরকার শিগগিরই মেনে নেবে।’ মোমবাতি প্রজ্বালনের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘আমরা মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে ধর্ষণের শিকার সব মা-বোনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আমরা চাই একটি সুস্থ সমাজ, যেখানে সবাই নিরাপদ।’