ময়লা-বাণিজ্যে কাউন্সিলররা

জনপ্রতিনিধি হলেও বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর ময়লা-বাণিজ্যে যুক্ত হয়েছেন। জোর খাটিয়ে ময়লা সংগ্রহের কাজ এবং এলাকা দখলের ঘটনা ঘটছে।

রাজধানীর পশ্চিম আগারগাঁও এলাকায় বর্জ্য সংগ্রহ করত এ টু জেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টার। ২০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি এ কাজ করে। গত মার্চ মাসে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছোট ভাই ও শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে কিছু ব্যক্তি এই বর্জ্য সংগ্রহের কাজ দখল করে নেয়।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্বে আসেন। গত ১১ মাসে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) অন্তত ৬টি ওয়ার্ডে আগের লোকজনকে হটিয়ে কাউন্সিলরের লোকজন ময়লা সংগ্রহের কাজ দখল করে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছে প্রথম আলো।

যাঁদের হটিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁদের অনেকেই ক্ষমতাসীন দল ও অঙ্গসংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু কাউন্সিলর ও তাঁদের লোকজনের সঙ্গে ক্ষমতার দাপটে পেরে উঠছেন না তাঁরা।

২০০৯ সালে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা আদতে কেউ মানছে না।

২০০৯ সালে অবিভক্ত সিটি করপোরেশন একটি অফিস আদেশের মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে মাসিক ফি সর্বোচ্চ ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়, যা আদতে কেউ মানছে না। বর্তমানে বর্জ্য সংগ্রহে এলাকাভেদে বাসাপ্রতি মাসে ৮০-২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। গুলশান, বনানীর মতো এলাকায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকাও আদায় করা হচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবদুল হামিদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার হোল্ডিংগুলোয় ফ্ল্যাট বা বাসার সংখ্যায় ভিন্নতা থাকে। তবে একটি হোল্ডিংয়ে গড়ে ৬ থেকে ৮টি করে ফ্ল্যাট বা বাসা রয়েছে বলে আমরা ধরে নিই।’

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৯ সালের খানা জরিপ অনুযায়ী, প্রতি খানায় গড়ে সদস্যসংখ্যা ৪ দশমিক ২ জন। আর বিশ্বব্যাংকের হিসাবে বর্তমানে ঢাকার জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখ। সে হিসাবে ঢাকায় পরিবার রয়েছে ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪টি।

সিটি করপোরেশন ও বর্জ্য সংগ্রহকারীদের তথ্য অনুযায়ী, বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য পরিবহন সুবিধা নিচ্ছে রাজধানীর ৮০ শতাংশের মতো পরিবার। প্রতিটি ফ্ল্যাট বা পরিবার থেকে ময়লা বাবদ গড়ে ১৫০ টাকা করে ধরলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে প্রায় ৫১ কোটি টাকা আদায় হয়, বছরে যা প্রায় ৬১২ কোটি টাকা।


এর আগে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর প্রথম আলোতে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসেছিল দুই সিটিতে ৪৫০ কোটি টাকার মত ময়লা বাণিজ্য হয়। তখন দুই সিটির হিসাবে হোল্ডিং (স্থাপনা) ছিল প্রায় চার লাখের মতো। গত দেড় বছরে দুই সিটি করপোরেশন অভিযান চালিয়ে নতুন অনেক হোল্ডিংকে করের আওতায় এনেছে। সব মিলিয়ে বর্তমানে হোল্ডিং সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৩ হাজার।

এর মধ্যে উত্তর সিটিতে হোল্ডিং রয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার। একটি হোল্ডিংয়ে গড়ে ৬টি ফ্ল্যাট বা বাসা এবং মাসে প্রতিটি বাসা থেকে গড়ে ১৫০ টাকা করে আদায় ধরলে বছরে প্রায় ৩৪০ কোটি টাকার বাণিজ্য করে ময়লা সংগ্রহকারীরা।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিবছর যে গৃহকর আদায় করে, তার চার ভাগের ১ ভাগ নেয় পরিচ্ছন্নতা বাবদ। গত অর্থবছরে নগরবাসীর কাছ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করা হয়েছে ১১৬ কোটি টাকার বেশি।

বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, উত্তর সিটিতে তিন হাজারের বেশি রেস্তোরাঁ রয়েছে। প্রতিটি রেস্তোরাঁ থেকে বর্জ্য সংগ্রহ বাবদ মাসে কমপক্ষে ২ হাজার টাকা নেওয়া হচ্ছে। গুলশান–বনানীর মতো অভিজাত এলাকাগুলোয় চার হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গড়ে প্রতি রেস্তোরাঁয় এক হাজার টাকা ধরলে তিন হাজার রেস্তোরাঁ থেকে মাসে আদায় হচ্ছে ৩০ লাখ টাকা। বছরে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে উত্তর সিটিতে বছরে অন্তত ৩৪৪ কোটি টাকার ময়লা-বাণিজ্য হচ্ছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন প্রতিবছর যে গৃহকর আদায় করে, তার চার ভাগের ১ ভাগ নেয় পরিচ্ছন্নতা বাবদ। গত অর্থবছরে নগরবাসীর কাছ থেকে পরিচ্ছন্নতা কর আদায় করা হয়েছে ১১৬ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু সিটি করপোরেশন বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহ করে না। তারা ময়লা নেয় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার সেন্টার–এসটিএস (বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য যেখানে জমা করা হয়) থেকে। আর বাসাবাড়ি থেকে এসটিএস পর্যন্ত ময়লা নেয় বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, যা এখন মূলত কাউন্সিলরদের দখলে চলে যাচ্ছে।

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গৃহকরের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা কর বাবদ যে টাকা নেওয়া হয়, তা মূলত সড়ক ঝাড়ু দেওয়া এবং এসটিএস থেকে ল্যান্ডফিল্ডে ময়লা পরিবহনের ব্যয়। তাঁর দাবি, পরিচ্ছন্নতা বাবদ উত্তর সিটির বছরে ব্যয় প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। কিন্তু পরিচ্ছন্নতা কর আদায় হয় ৫০ কোটির মতো।

অবশ্য চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে। এ জন্য নগরবাসীকে আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না। পাশের দেশ ভারতের কলকাতায় মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কর্মীরা বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য নিয়ে যান। সে জন্য বাসিন্দাদের আলাদা কোনো ফি দিতে হয় না।

জোর খাটিয়ে কাজ দখল

পশ্চিম আগারগাঁওয়ের এ টু জেড মিডিয়া অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভিস সেন্টারের মালিক নাজমুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গত মার্চে তাঁর ময়লা নেওয়ার কাজ বেদখল হয়ে গেলে জুন মাসে তিনি থানায় জিডি করেন। সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চিঠি দেন। আবেদন করেন মেয়র বরাবর। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ কে পেল, কে পেল না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জনগণ সেবা পেল কি না, সেটা মুখ্য বিষয়।
আতিকুল ইসলাম, মেয়র. ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন

নাজমুল হকের দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে শেরেবাংলা নগর থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, নাজমুল যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাঁর ভাই ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী। প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ময়লা সংগ্রহের কাজ করত। এলাকার বাড়ি মালিক সমিতি নিজেরা এই ময়লা সংগ্রহের কাজ করতে সিটি করপোরেশনে আবেদন করে। নাজমুলের অনুমোদনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বাড়ি মালিক সমিতি এলাকার বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করছে।

আসাদুজ্জামানের ভাই ডিএনসিসির ২৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফোরকান হোসেন। এ বিষয়ে কথা বলতে তাঁর মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু কেউ ধরেননি।

ঢাকা উত্তরের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের রানাভোলা, সিরাজ মার্কেট এলাকার বর্জ্য সংগ্রহ করতেন মো. শহীদ। সিটি নির্বাচনের পর স্থানীয় কাউন্সিলর নাছির উদ্দিন তাঁর লোকজনকে দিয়ে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করাচ্ছেন। শহীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। বললে এলাকায় থাকতে পারব না।’

কাউন্সিলর নাছির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শহীদ নামের লোকটিকে আমি চিনি না। আমার কাছে কখনো আসেনি।’ এলাকার লোকজন বর্জ্য নিয়ে তাঁর কাছেই অভিযোগ করে তাই আপাতত তাঁর (কাউন্সিলর) তত্ত্বাবধানেই বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ চলছে।

ফাইল ছবি

ক্ষমতার দাপটে পেরে ওঠেননি

ঢাকা উত্তরের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপাড়া এলাকার ১০ বছর ধরে বর্জ্য সংগ্রহ করত পরিবেশ বন্ধু ক্লিনিং সার্ভিস। সিটি নির্বাচনের পর লিটন সিকদার ও মো. নাসির নামের দুই ব্যক্তি ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মারধর করে ময়লা সংগ্রহের কাজ দখল করে নেয়। লিটন ও নাসির কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন ওরফে যুবরাজের লোক হিসেবে পরিচিত।

পরিবেশ বন্ধু ক্লিনিং সার্ভিসের সভাপতি নাগর আলী ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি কাউন্সিলরকে জানালে তিনি বললেন, তোমরা অনেক দিন করছ। এখন আমার লোকজন করবে।’ এ বিষয়ে মেয়রের কাছেও লিখিত অভিযোগ করেছেন নাগর আলী।

অভিযোগের বিষয়ে লিটন সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে এলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদ ছিল। এখন নতুন যে কাউন্সিলর হয়েছে, কাজ করতে তো তার অনুমতি লাগবে। আর যারা ময়লা নিত তারা ঠিকভাবে কাজ করত না।’ বর্তমানের পুরো ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে বর্জ্য লিটন সিকদার সংগ্রহ করেন। দলীয় পদ না থাকলেও নিজেকে আওয়ামী লীগ কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন।

নাগরিকদের ভোগান্তির মতো বিষয়গুলোতে সিটি করপোরেশনের নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। ময়লা সংগ্রহের কাজটি করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তার কঠোর তদারকি প্রয়োজন।
আকতার মাহমুদ , সভাপতি ,বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স

কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘লিটন সিকদার ও মো. নাসির কেউই আমার লোক না। আমি কাউকে বলিনি ময়লার কাজ নিতে। নাগর যে অভিযোগ করেছে, সেটা মিথ্যা।’ তিনি বলেন, এখন ভ্যান সার্ভিসের জন্য টেন্ডার হচ্ছে। এতে যারা পাবে, তারাই ময়লা সংগ্রহের কাজ করবে।

৭ নম্বর ওয়ার্ডের রূপনগর আবাসিক এলাকার ৬ থেকে ৮ এবং ১১ থেকে ২২ নম্বর সড়কের বর্জ্য সংগ্রহ করতেন আমীর আলী। তিনি ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সভাপতি। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তফাজ্জল হোসেন। নির্বাচনে আমীর আলী তফাজ্জল হোসেনের বিরোধী প্রার্থীর হয়ে কাজ করেন। নির্বাচনের পরপরই আমীর আলীর কাছ থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজটি দখল করে নেয় কাউন্সিলরের লোকজন।
কাউন্সিলর তফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বা আমার লোকজন তার কাজ বন্ধ করে দেয়নি। এর মধ্যে মধ্যস্বত্বভোগী কেউ আছে কি না, আমার জানা নেই।’

নারী কাউন্সিলরের কাজ দখলে নিলেন পুরুষ কাউন্সিলর

২৯ নম্বর ওয়ার্ডে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ময়লা সংগ্রহের কাজ করত দুস্থ মানুষের কথা (ভিওডি) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি উত্তর সিটির সংরক্ষিত ২৯, ৩০ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর শাহীন আক্তারের। এই ওয়ার্ডটি মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোড, জয়েন্ট কোয়ার্টার (আজিজ মহল্লা), হাজি চিনু মিয়া রোড (টিক্কাপাড়া) ও জান্নাতবাগ (বিজলি মহল্লা) নিয়ে গঠিত।

গত নির্বাচনে ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন সলিম উল্লাহ্ ওরফে সলু। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মাথায় ময়লা নেওয়ার কাজটি দখলে নেন তিনি। গত অক্টোবর থেকে কাউন্সিলরের প্রতিষ্ঠান স্বপ্ন মানবিক কল্যাণ সংস্থা (স্বমকস) ময়লা সংগ্রহের কাজ করছে।

এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ্‌ মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো উত্তর দেননি। ওয়ার্ডের সচিব ইফতেখারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্বপ্ন মানবিক কল্যাণ সংস্থার সভাপতি কাউন্সিলর সলিম উল্লাহ্ বড় ভাই এম এ ওয়াদুদ। ওয়াদুদ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক ও কাউন্সিলরের উপদেষ্টা।

রাজধানীর মুক্তাঙ্গন এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
ছবি: আশরাফুল আলম

কেন দখল-বেদখল

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ময়লা সংগ্রহে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, যাঁরা বাসা থেকে প্রতিদিন ময়লা সংগ্রহ করেন তাঁদের মাসিক বেতন কমবেশি ৩ থেকে ৮ হাজার টাকা। আর আছে ভ্যান খরচ। যেমন কোনো কাউন্সিলর বা তাঁর লোকজন যদি ২ হাজার ফ্ল্যাটের ময়লা সংগ্রহ করেন আর ১৫০ টাকা করে মাসে আদায় করেন তাহলে তাঁর মাসিক আয় ৩ লাখ টাকা। এর জন্য ৪-৫টি ভ্যানগাড়ি আর ৮ জন কর্মী লাগবে। তাঁদের বেতন ও সামান্য ভ্যান খরচ বাদ দিলে বাকি টাকা লাভ। তিন ভাগের এক ভাগে খরচ ধরলেও মাসে লাভ ২ লাখ টাকা।

উত্তর সিটিতে ৩৪৪ কোটি টাকার যে বাণিজ্য, তা হয় মাত্র ৫৪টি ওয়ার্ডে। বছরে প্রতি ওয়ার্ডে ময়লার ব্যবসার পরিমাণ গড়ে ৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার। ফলে ময়লা নিয়ে সামনে আরও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।


নতুন পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ

এ অবস্থায় নতুন নিয়মে দরপত্রের মাধ্যমে একটি ওয়ার্ডে একটি প্রতিষ্ঠানকে ময়লা সংগ্রহের দায়িত্ব দেওয়ার পথে যাচ্ছে উত্তর সিটি। প্রতিটি বাসার মাসিক ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। উত্তর সিটির বোর্ড সভায় গত ২১ ডিসেম্বর এই প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে।

মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাসাবাড়ির বর্জ্য সংগ্রহের কাজ কে পেল, কে পেল না, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। জনগণ সেবা পেল কি না, সেটা মুখ্য বিষয়। কিছু ওয়ার্ডে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন ব্যবস্থাপনা চালু করা হবে। সফলতা পেলে অন্য ওয়ার্ডে তা চালু করা হবে। নির্ধারিত ফির বেশি নিলে জনগণ অ্যাপের মাধ্যমে জানাতে পারবে। বেশি টাকা নিলে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্য সংগ্রহের কাজে যুক্ত তাঁদের অভিযোগ, বর্জ্য সংগ্রহের কাজটি ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মী ও কাউন্সিলরদের নিয়ন্ত্রণে দিতে সিটি করপোরেশন এমন উদ্যোগ নিচ্ছে। দরপত্রে অংশ নিতে আবেদনপত্রে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক করার এমন সন্দেহ পোক্ত হচ্ছে।

ইতিমধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে এই নিয়মে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ চালু হয়েছে। অধিকাংশ ওয়ার্ডে কাজ পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল ও কাউন্সিলরের লোকজন। এসব প্রতিষ্ঠানকে দোকানপ্রতি ৩০ টাকা এবং বাসাবাড়ি থেকে ১০০ টাকা করে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ এলাকায় ইচ্ছেমতো টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ আছে।

নগরবিদদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি আকতার মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, নাগরিকদের ভোগান্তির মতো বিষয়গুলোতে সিটি করপোরেশনের নজরদারির ঘাটতি রয়েছে। ময়লা সংগ্রহের কাজটি করার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনগুলোর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তার কঠোর তদারকি প্রয়োজন।