যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদা চান কাউন্সিলররা

নগর ভবনে অনুষ্ঠিত ডিএসসিসির পঞ্চম বোর্ড সভায় গতকাল মঙ্গলবার এই প্রস্তাব তোলা হয়।

ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পদমর্যাদা যুগ্ম সচিবের সমমান করতে চায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। গতকাল মঙ্গলবার নগর ভবনে অনুষ্ঠিত ডিএসসিসির পঞ্চম বোর্ড সভায় এই প্রস্তাব তোলা হয়। প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানোর বিষয়ে করপোরেশনের সর্বোচ্চ ফোরাম বোর্ড সভা একমত হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলরদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।

ডিএসসিসি সূত্র বলছে, গত কয়েকটি বোর্ড সভায় কাউন্সিলরদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গতকালের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস আলোচনা উত্থাপন করেন। পরে কাউন্সিলরদের মধ্যে যাঁরা বক্তব্য দিয়েছেন, তাঁরা সবাই সম্মতি দিয়ে মেয়রকে ধন্যবাদ জানান।

একজন কাউন্সিলর যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদা নিয়ে কী করবেন। কাউন্সিলররা জনগণের সেবক। সেবা করার চেয়ে মর্যাদা ও সম্মানীর বিষয়টিতে এখন বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যা উচিত নয়।
তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ

অবশ্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আইনপ্রণেতারা যদি মনে করেন, তাহলে পদমর্যাদা দিতে পারেন। তবে তিনি মনে করেন, অন্য পদমর্যাদার চেয়ে বড় পদ কাউন্সিলর। কারণ, তাঁরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। এটাই তাঁদের জন্য অনেক বড় পদ ধরেই জনসেবা করতে হবে।

ডিএসসিসির গতকালের বোর্ড সভা অংশ নেওয়া একজন কাউন্সিলর প্রথম আলোকে বলেন, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদা দেওয়ার পাশপাশি কাউন্সিলরদের মাসিক সম্মানী ৬০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অফিস ভাড়া ২৪ হাজার টাকা, অফিসের খরচ ১২ হাজার টাকা এবং বোর্ড সভায় অংশ নিলে ২ হাজার টাকা সম্মানী নির্ধারণেরও প্রস্তাব করা হয়েছে। সে হিসাবে একজন কাউন্সিলর মাসে সব মিলিয়ে ৯৮ হাজার টাকা পাবেন।

এই কাউন্সিলর জানান, মাসিক সম্মানী হিসেবে এখন একজন কাউন্সিলর ৩৫ হাজার টাকা পাচ্ছেন। অফিস ভাড়া বাবদ পাচ্ছেন ৮ হাজার টাকা, অফিসের খরচ ৪ হাজার টাকা। মাসে সব মিলিয়ে ৪৭ হাজার টাকা পান একজন কাউন্সিলর।

২৫টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডসহ ডিএসসিসির বর্তমান কাউন্সিলর ১০০ জন। প্রস্তাবিত সম্মানী কার্যকর হলে একজন কাউন্সিলরের পেছনে সব মিলিয়ে মাসে বাড়তি খরচ হবে ৫১ হাজার টাকা। বর্তমানে কাউন্সিলরদের পেছনে মাসে (সম্মানী বাবদ) করপোরেশনের খরচ ৪৭ লাখ টাকা। নতুন সম্মানী কার্যকর হলে করপোরেশনকে মাসে ৯৮ লাখ টাকা খরচ করতে হবে।

সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের সময় ২০১৬ সালে কাউন্সিলরদের মাসিক সম্মানী তিন গুণ বাড়িয়ে উপসচিব পদমর্যাদার প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছিল। প্রস্তাবটি স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠালেও পরে তা কার্যকর হয়নি। তবে কাউন্সিলরদের মাসিক সম্মানী দ্বিগুণ করা হয়। তখন একজন কাউন্সিলর মাসিক সম্মানী হিসেবে ১৭ হাজার ৫০০ টাকা পেতেন। এর সঙ্গে অফিস খরচ ও কার্যালয়ের ভাড়া যোগ করলে মোট সম্মানী হতো ৩০ হাজার টাকা।

ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের পদমর্যাদার প্রস্তাবকে ভ্রান্ত ধারণা বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, একজন কাউন্সিলর যুগ্ম সচিবের পদমর্যাদা নিয়ে কী করবেন। কাউন্সিলররা জনগণের সেবক। সেবা করার চেয়ে মর্যাদা ও সম্মানীর বিষয়টিতে এখন বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, যা উচিত নয়।

সরকার মেয়রদের মন্ত্রীর পদমর্যাদা দিয়ে একটা ভুল বার্তা দিয়েছে উল্লেখ করে তোফায়েল আহমেদ বলেন, এ জন্যই পদমর্যাদার বিষয়গুলো আসছে। তিনি বলেন, মেয়র মেয়রই। তাঁর নিজস্ব একটা পদমর্যাদা আছে। সেটা মেয়রের পদমর্যাদা। এখানে মন্ত্রীর পদমর্যাদা লাগবে কেন? এটাকে মন্ত্রীর পদমর্যাদার সঙ্গে তুলনা করলে ঠিক হবে না।