যেভাবে আত্মোৎসর্গ করেছিলাম, সেভাবে সম্মান পাইনি: কে এম সফিউল্লাহ

বক্তব্য দেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ। জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা, ০৭ জানুয়ারি
ছবি: দীপু মালাকার

সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১-এর চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ বলেছেন, যুদ্ধের সময় তাঁরা যেভাবে নিজেদের উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন, সেভাবে সম্মান পাননি। যে সেক্টর কমান্ডাররা মারা গেছেন, তাঁদেরও উপযুক্ত সম্মান দেওয়া হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল (অব.) চিত্ত রঞ্জন দত্ত ও লে. কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) আনোয়ার উল আলমের স্মরণে আয়োজিত সভায় কে এম সফিউল্লাহ এসব কথা বলেন। রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার এই স্মরণসভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ’৭১।

কে এম সফিউল্লাহ বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমরা যে সম্মানটুকু অর্জন করেছিলাম, সেটা পেয়েছি কি না, তা বুঝতে পারছি না। সরকারিভাবে আমরা কিন্তু সে জায়গাটা এখনো পাইনি। যেভাবে আমার আত্মোৎসর্গ করেছিলাম, সেভাবে কিন্তু আমরা সম্মানটা পাইনি। যে সেক্টর কমান্ডাররা মারা গেছেন, তাঁদেরও উপযুক্ত সম্মান দেওয়া হয়নি। আমরা যাঁরা বেঁচে আছি, তাঁরা যেন একে ওপরকে সহযোগিতা করি।’

মুক্তিযুদ্ধে চিত্ত রঞ্জন দত্ত, আবু ওসমান চৌধুরী ও আনোয়ার উল আলমের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন কে এম সফিউল্লাহ। তিনি বলেন, তিনি যখন সিলেটে যুদ্ধ করেন, তখন তাঁর সঙ্গে দেখা হয় চিত্ত রঞ্জন দত্তের। তাঁকে সফিউল্লাহ নিজের সেক্টরে নিয়ে আসেন। আবু ওসমান চৌধুরীকে নিজের আত্মীয় উল্লেখ করে সফিউল্লাহ বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ছেড়ে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার সময় আবু ওসমানও তাঁর সঙ্গে যুদ্ধে যোগ দেন। তিনি যখন টাঙ্গাইলে ছিলেন, তখন আনোয়ার উল আলম তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। পরে কাদের সিদ্দিকীর কাদেরিয়া বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন আনোয়ার উল আলম।

কে এম সফিউল্লাহ ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণকেই মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ওই ভাষণ এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করেছিল যে আমরা সবকিছু করতে পারতাম।’

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের উপদেষ্টা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, যে লক্ষ্য নিয়ে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সে লক্ষ্য নিয়েই যেন দেশ অগ্রসর হয়।

তরুণদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবময় ইতিহাস অবিকৃতভাবে তুলে ধরতে হবে। সে ক্ষেত্রে সেক্টর কমান্ডারস ফোরামকে আরও গতিশীল হতে হবে।

অনেক রাজাকার এখন মুক্তিযোদ্ধা হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন ফোরামের সাবেক মহাসচিব লে. জেনারেল (অব.) এম হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের নামে মুক্তিযোদ্ধাদের যেন অপমান করা না হয়। নতুন করে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর দরকার নেই। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির কাছে প্রাপ্য সম্মানটুকু চান। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ট্রাইব্যুনাল গঠনের দাবি জানান তিনি।

ফোরামের সহসভাপতি সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল আলম সেক্টর কমান্ডারের নানা ভূমিকার কথা তুলে ধরে বলেন, এই কমান্ডারদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। আবার যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতেও তাঁরা সোচ্চার ছিলেন।

স্মরণসভায় কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব। প্রস্তাবে বলা হয়, স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুসহ মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের ১১টি অঞ্চলে সরকারি উদ্যোগে একটি করে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যা জাদুঘর প্রতিষ্ঠা এবং সেক্টর কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করা।

সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।