যৌক্তিক আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভাশিস থাকবে: ঢাবি প্রক্টর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী
ফাইল ছবি, প্রথম আলো

যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শুভাশিস থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী। লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভকারী বাম ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তব্য জানতে চাইলে আজ রোববার তিনি এ কথা বলেন।

গ্রেপ্তার বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের রাজনৈতিক সহকর্মী ও কয়েকজন সহপাঠী আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানীর সঙ্গে দেখা করে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি দাবি করেন। সে সময় গোলাম রব্বানী তাঁদের বলেন, ‘আমি কথা বলব। প্রক্টরের কাজ তো বিবৃতি দেওয়া নয়, ফ্যাক্টস বর্ণনা করা। এই আসাটা তো তোমরা ঘটনার দিনও আসতে পারতে। তোমাদের একজনও কি সেদিন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছ যে স্যার আমাদের এই অবস্থা, সহযোগিতা চাই? তোমরা যৌক্তিক দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রাম কর, সে ক্ষেত্রে তোমাদের প্রতি সব সময়ই আমাদের শুভাশিস থাকবে। কিন্তু সহিংসতা, পারস্পরিক বিরুদ্ধ অবস্থান, সেটিকে কতটা ইতিবাচকভাবে হ্যান্ডেল করে তোমরা আন্দোলন করলে, সেই দৃষ্টিভঙ্গিগুলোও তোমাদের চিন্তা করার অনুরোধ করব।’

লেখক মুশতাক আহমেদের কারাগারে মৃত্যুর প্রতিবাদ ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল করতে গেলে শাহবাগে পুলিশের সঙ্গে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সে সময় বাম সংগঠনের সাতজন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে তাঁরা কারাগারে আছেন।

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী কাজী রাকিব হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আকিব ও আরাফাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর নজির আমিন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। বাকি চারজন তানজিমুর, তামজিদ, নাজিফা ও জয়তী বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত শুক্রবার রাতে পুলিশ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় এই সাতজনের বিরুদ্ধে একটি হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করে।

এই সাতজনের মুক্তির দাবিতে আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন তাঁদের সহপাঠী ও সংগঠনের কর্মীরা।

প্রতিবাদ সমাবেশে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী কাজী রাকিব হোসেন বলেন, ‘সাতজনকে তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যাচেষ্টার মামলা দেওয়া হলো। পুলিশ শিল্ড-বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ছিল, অথচ এখন বলা হচ্ছে আমরা নাকি তাঁদের হত্যার চেষ্টা করেছি। গ্রেপ্তার সাতজনকে জামিন দেওয়া হয়নি।’

সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী মাইন আহমেদ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র আদনান তূর্য প্রমুখ বক্তব্য দেন।

প্রতিবাদ সমাবেশ শেষে প্রক্টরের কার্যালয়ে যান গ্রেপ্তার ছাত্রদের ৮-১০ জন সহকর্মী। সেখানে প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানীকে তাঁরা বলেন, ‘আমরা কোনো সহিংসতা করিনি। আমাদের সামনে প্রায় ২০০ জন পুলিশ দাঁড়ানো ছিল। আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন পুলিশ আমাদের বাধা দেয় ও লাঠিপেটা করে।’
জবাবে প্রক্টর বলেন, ‘তোমরা ওই মুহূর্তে আমাদের জানাতে। বলতে এই অবস্থা, এই করতে হবে—আমি সেটাই করতাম।’

তখন উপস্থিত বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বলেন, ‘আমরা আইনগত একটা ব্যবস্থা আশা করছি। আপনারা ঘটনা পর্যালোচনা করে আমাদের পাশে দাঁড়াতেন, আমাদের দোষ থাকলে শাস্তি দিতেন। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অন্তত একটা বিবৃতি আমরা দেখতে চাই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, যৌক্তিক আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কখনোই প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদারতাটিকে কেউ অন্যভাবে ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে সবকিছুতে জড়ানোর চিন্তাভাবনা ও সেটিকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যাওয়া কারও জন্যই কল্যাণকর নয়। তিনি বলেন, ‘যে পক্ষই জড়িত থাকুক, তাঁদের কাছে আমাদের অনুরোধ হলো সংযত আচরণ এবং শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার জন্য যেন তাঁরা সহযোগিতা করেন।’