রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত, ধারণা পুলিশের

আগুনে ক্ষতিস্ত একটি দোকান
প্রথম আলো

রাসায়নিকের গুদাম থেকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার ভবনটিতে আগুন লাগে বলে মনে করছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, ভবনের নিচতলার মার্কেটে ১৬ থেকে ২০টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে রাসায়নিক পণ্য কেনাবেচা হতো। ভবনের নিচতলার পেছনের দিকের একটি রাসায়নিকের গুদাম থেকে আগুনের সূত্রপাত বলে মনে করছে পুলিশ।


পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত উপকমিশনার কামরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ভবনটির নিচতলায় দোকান রয়েছে। এসব দোকানে রাসায়নিক পণ্য বিক্রি হতো। রাসায়নিক পণ্য বিক্রির কোনো দোকানের গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে তাঁরা মনে করছেন। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ভবনের নিচতলায় পেছনের দিকে বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভবনটির নিচতলার ৫–৬টি দোকান আগুনে প্রায় পুরোটাই পুড়ে গেছে। দোকান ও গুদামের ভেতরে বড় বড় ড্রামগুলো পুড়ে গেছে। এ ছাড়া রাসায়নিক পণ্য কেনাবেচায় ব্যবহৃত কিছু ছোট ছোট কনটেইনারও দেখা গেছে।
তবে ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আগুনের সূত্রপাত নিয়ে সুস্পষ্ট করে কিছু বলেননি। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত, তা তদন্ত করে দেখা হবে। তাঁরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন বলেও জানিয়েছেন।

অন্যদিকে ঢাকার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ভাস্কর দেবনাথ বলেছেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি দল ঘটনাস্থলে আসবে। তারা পরীক্ষা করে দেখবে রাসায়নিক থেকে আগুন লেগেছে কি না এবং ভবনের দোকানগুলোতে এ ধরনের পদার্থ আছে কি না। আগুন লাগার আর কোনো ঝুঁকি আছে কি না।

আজ শুক্রবার ভোররাতে আরমানিটোলার ভবনটিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চারজন মারা গেছেন। আহত ২১ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর মধ্যে ৪ জন আইসিইউতে চিকিৎসাধীন।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, রাত সোয়া তিনটার দিকে ওই ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। ওই ভবনের পাশের একটি ভবনের একজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ওই ভবনের নিচে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। তাঁর দাবি, আশপাশের প্রায় সব ভবনেই এ ধরনের গুদাম রয়েছে।

শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন জানান, সেখানে চিকিৎসাধীন চারজনের শরীরের ২৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ভবনের বাসিন্দাদের জানালার গ্রিল কেটে বের করে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো বোঝা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস তদন্ত কমিটি গঠন করবে।

আগুনে পুড়ে গেছে গুদামে থাকা ড্রামগুলো।
ছবি: প্রথম আলো

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, আগুন লাগার পরপর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় ভবনের নিচতলা। ধীরে ধীরে ধোঁয়া উঠতে থাকে ওপরের দিকে। এতে ওপরের তলার বাসিন্দারা আগুনের বিষয়টি টের পান। এ সময় মানুষ বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও ধোঁয়া ও আগুনের কারণে বের হতে পারেননি। তাঁরা ওপরের দিকে উঠতে থাকেন। তবে ভবনের ছাদ তালাবদ্ধ থাকায় কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। বিভিন্ন ফ্লোরে আটকে থাকা লোকজন চিৎকার করতে থাকেন। আটকে পড়া বাসিন্দারা বারান্দা ও জানালা থেকে মোবাইলের আলো জ্বেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন।

ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিভিন্ন ফ্লোর থেকে অন্তত ১৩–১৪ জনকে ক্রেন ব্যবহার করে বের করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁরা বারান্দার গ্রিল কেটে বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন। পরে একে একে আটকে পড়া সবাইকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়।