রুখে না দাঁড়ালে মৌলবাদীদের সাহস বাড়বে

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে মানববন্ধন হয়
ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এদের প্রতিহত করা সংস্কৃতিকর্মীদের নৈতিক দায়িত্ব। এখনই রুখে না দাঁড়ালে মৌলবাদীদের সাহস বেড়ে যাবে।

আজ শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এক মানববন্ধনে পথনাটক পরিষদের সহসভাপতি মিজানুর রহমান এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যানারে এই মানববন্ধন হয়।

মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে ১১ ডিসেম্বর বেলা তিনটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংস্কৃতিকর্মীদের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

মিজানুর রহমান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ অবিচ্ছেদ্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হবে—এটি আমাদের জন্য আনন্দের সংবাদ, কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধীদের কাছে এটি বিষাদের সংবাদ আমরা মনে করি, বাংলাদেশ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসাম্প্রদায়িক দেশ। বাংলাদেশ যখন তার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী ভাস্কর্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এদের প্রতিহত করা সংস্কৃতিকর্মীদের নৈতিক দায়িত্ব। এখনই রুখে না দাঁড়ালে মৌলবাদীদের সাহস বেড়ে যাবে। সাহস বেড়ে গেলে এরা বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠীকে দাঁতভাঙা জবাব দেবে শিল্পীসমাজ।’

গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, পথনাটক পরিষদ, যাত্রা শিল্প উন্নয়ন পরিষদ, সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, গণসংগীত সমন্বয় পরিষদ, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, চারুশিল্পী সংসদ, আইপিআই ঢাকা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরাও মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।

গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শেই বাংলাদেশ চলবে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ যাদের ভালো লাগবে না, তারা পাকিস্তানে চলে যেতে পারে। অসাম্প্রদায়িকতার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা বরাবরই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। ভাস্কর্য নিয়ে মৌলবাদীরা ধর্মের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে। ভাস্কর্য সভ্যতার অংশ, ভাস্কর্য থাকবে। সংস্কৃতিকর্মীদের দাবি, আমরা যে যার ধর্ম পালন করব, ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে নিজেদের ঐতিহ্যগুলো উদ্‌যাপন করব। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার।’

সরকারের সমালোচনা করে মানজার চৌধুরী বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, এটি নিয়ে সরকারের প্রথম থেকে যে অবস্থানে থাকার কথা ছিল, তা দেখা যায়নি। এই কৌশলের রাজনীতি বাদ দিতে হবে। এই বাংলাদেশ সফলতার বাংলাদেশ, এই বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, সব ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের বাংলাদেশ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার—আমাদের সফলতা। এই সফলতার বাংলাদেশকে কেউ নষ্ট করতে পারবে না।