রোগী বাড়ছে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে

হাসপাতালটির বয়স চার বছর। শুরুতে রোগী পেতে কষ্ট হলেও এখন প্রতিটি বিভাগেই লম্বা লাইন। সেবার মান নিয়ে রোগীরা এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট। সব মিলে রোগী বেড়েছে রাজধানীর উত্তরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। তবে কিছু কিছু বিভাগ এখনো চালু হয়নি।
গোলাম মহিউদ্দিনকে নিয়মিত ডায়ালাইসিস করাতে হয়। একটি বেসরকারি হাসপাতালে অনেক দিন দেখিয়েছেন। পাঁচ মাস ধরে ডায়ালাইসিস করাচ্ছেন কুর্মিটোলায়। তিনি বলেন, ‘এটার খোঁজ জানার পরে এখানেই করাই। সেবার মানও ভালো।’
গতকাল হাসপাতালে দেখা যায়, আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে রোগীদের ডায়ালাইসিস চলছে। প্রতিটি শয্যাতেই রোগী। দিনে দুই ভাগে প্রায় ৬০ জন রোগী আসে এই বিভাগে।
৫০০ শয্যার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ২০১২ সালে চালু হয়। এর মাস ছয়েক পরেই অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দেন মো. বেলাল হোসেইন। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নিজেরা ভ্যানে করে রোগী নিয়ে আসতাম। তখন রোগী ভর্তি থাকত এক শর মতো। বাইরে থেকে দেখে মানুষ একে বেসরকারি হাসপাতাল ভাবত। এখন অবস্থা পাল্টেছে। ২০১৪ সালের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করেছে। হাসপাতালে আগে রিকশায় করে আসা যেত না। এখন রিকশা ঢোকে। এ ছাড়া সড়ক পারাপারের জন্য হাসপতালের সামনে পদচারী-সেতুটি নির্মাণ করার পরে মানুষের যাতায়াতে সুবিধা হয়েছে।’
হাসপাতালে ঢুকতেই দেখা যায়, ওষুধ কাউন্টারের সামনে বেশ বড় লাইন। আসমা বেগম ওষুধ নিয়ে বের হলেন। ছেলের ঠান্ডা-জ্বর। চিকিৎসকের দেওয়া সব ওষুধই হাসপাতাল থেকে পেয়েছেন। তবে বললেন, সব সময় সব সময় ওষুধ পান না।
টিকিট কাউন্টারের ছয়টি ডেস্কেই লাইন। হাসপাতালের ল্যাবেও বেশ ভিড়। গড়ে প্রতিদিন ৩০টির মতো সিটি স্ক্যান ও ২০০-এর মতো এক্স-রে হচ্ছে। প্যাথলজিতে সরকারি মূল্যে ৫৯টি পরীক্ষা হয়। নিঃসন্তান দম্পতিরা প্রতি বুধবার দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অধীনে চিকিৎসা নিতে পারেন। ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার আগেই রোগ নির্ণয়ের জন্য ‘ওয়ান-স্টপ’ সেবা দেওয়া হয়। থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র চালু হয়েছে।
হাসপাতালে ১২১ জন চিকিৎসক ও ১৭৭ জন নার্স আছেন। গাইনি, শিশু ও মেডিসিন বিভাগে রোগী বেশি। হাসপাতালটিতে এখনো আইসিইউ চালু হয়নি। অপেক্ষাধীন আছে শিশুদের স্পেশাল কেয়ার ইউনিট। অস্ত্রোপচারকক্ষ পাঁচটির মধ্যে তিনটি চালু আছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খোন্দকার শহিদুল গণি বলেন, ‘ইনডোরে রোগী এখন ৫০০ থেকেও বেশি হয়। গড়ে প্রতিদিন ২৩০০ থেকে ২৬০০ রোগী আউটডোরে আসে।’ তাঁর মতে, এ হাসপাতালটি দেশের হাসপাতালগুলোর মধ্যে বহির্বিভাগে সবচেয়ে ভালো সেবা দিচ্ছে। আইসিইউসহ কিছু বিভাগ চালু না হওয়ার ব্যাপারে বলেন, ‘অন্তর্বিভাগে ৪০ শতাংশ লোকবল দিয়ে হাসপাতালটি চলছে। প্রয়োজনীয় জনবল পেলেই এগুলো চালু হবে। পরিচালক আরও বলেন, ‘এটা সরকারি হাসপাতাল। সবার জন্য উন্মুক্ত। মানুষ যেন আসে। সে চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’