রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনের জন্য রাখাইনে তাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। একই সঙ্গে মিয়ানমার সরকারকে এ সংকটের দায়ভার নেওয়া এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী দেশগুলোকে যথাযথ আর্থিক ও আইনি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। পাশাপাশি সংকটের স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক তদন্ত করতে হবে।

বুধবার রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে আয়োজিত দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে প্রচারিত দ্বিতীয় ঢাকা ঘোষণায় এসব দাবি জানানো হয়েছে। ওই ঘোষণায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে ১৫ দফার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ‘প্রবাসী রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সংযুক্তি: বৈশ্বিক বাস্তুচ্যুতির ওপর গুরুত্বারোপ’ শীর্ষক অনলাইনে দুই দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষে এ ঘোষণা আসে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ (সিজিএস), একশনএইড বাংলাদেশ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর পিস অ্যান্ড জাস্টিজ (সিপিজে) ওই সম্মেলনের আয়োজন করে। বাংলাদেশে ব্যাপক হারে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের অনুপ্রবেশের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এ অনলাইন সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

জুম ও ফেসবুক লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১২টি দেশ থেকে রোহিঙ্গা অভিবাসী এবং রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও মানবাধিকারকর্মীরা সম্মেলনে অংশ নেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারাও এতে অংশ নেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজিএসের পরিচালক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, চাপটা দিতে হবে মিয়ানমারের ওপর। পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য সেখানকার কিছু ব্যক্তির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিপিজের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মঞ্জুর হাসান বলেন, অন্য সংকটের কারণে দৃষ্টি সরে গেছে। তাই এই নজর যাতে না সরে, সেটাও বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রবাসী রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে আছেন। তাঁদের দৃশ্যমান হতে হবে। উচ্চকণ্ঠ হতে হবে।

একশনএইডের এদেশীয় পরিচালক ফারাহ কবির দ্বিতীয় দিনের প্রথম কর্ম অধিবেশন সঞ্চালনার সময় ভূরাজনীতি, রোহিঙ্গাদের ওপর নিষ্পেষণ, সেখানকার পরিস্থিতি, প্রবাসী রোহিঙ্গাদের ভূমিকার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন।

এই কর্ম অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের অভিন্ন সুরের ওপর গুরুত্বারোপের পাশাপাশি গণমাধ্যমের বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকা নিয়ে বক্তারা কথা বলেন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশনের সভাপতি তুন খিন বলেন, ১৭ বছর বয়সে রাখাইন ছেড়ে লন্ডনে যান তিনি। ফিরে যেতে চান, যেখানে তিনি জন্মেছেন। যুক্তরাজ্যে থাকা রোহিঙ্গারা অক্সফোর্ড, ইউসিএল, ইম্পেরিয়াল কলেজসহ সেখানকার খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যাচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের রাখাইনে ও কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গাদের জীবনের উন্নয়নে কাজ করছেন।

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা কানাডার উইনিপেগ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞানের অধ্যাপক কাউসার আহমেদ বলেন, রোহিঙ্গাদের বৈশ্বিকভাবে নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। বিশ্বের সব দেশের রোহিঙ্গা কর্মীদের এক করাটা সহজ নয়। তিনি মনে করেন, প্রবাসী রোহিঙ্গারা অর্থবহ অ্যাজেন্ডা ঠিক করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

সম্মেলনের শেষ দিনের সমাপনী অধিবেশনের আলোচনায় অংশ নেন সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ ফেলো এম শহিদুল হক, সাবেক ডাচ রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন রাখাইন কমিশনের অন্যতম সদস্য লেটেশিয়া ভেন ডেন ও আসুম এশিয়া প্যাসিফিক রিফিউজি রাইটস নেটওয়ার্কের রোহিঙ্গা ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রধান লিলিয়ান্নে ফান।