লিলি চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা

রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে লিলি চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করে
ছবি: সাইফুল ইসলাম

বিশিষ্ট নাট্যাভিনেত্রী ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর সহধর্মিণী লিলি চৌধুরী নাট্যজগতের একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন। সাম্প্রদায়িকতাকে উপেক্ষা করে তিনি সংস্কৃতিজগতে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে লিলি চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে এসব কথা উঠে আসে।

গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বনানীর বাসভবনে ইন্তেকাল করেন লিলি চৌধুরী। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। আজ বাদ জোহর বনানী কবরস্থানে ছেলে মিশুক মুনীরের কবরে লিলি চৌধুরীকে দাফন করা হবে।

শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজনে নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার বলেন, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে মঞ্চনাটকের পথ যাঁরা করে দেন, তাঁদের অন্যতম লিলি চৌধুরী। স্মৃতিচারণা করে রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘প্রিয়জন হারানোর দুঃখ নিয়ে বেঁচে ছিলেন লিলি চৌধুরী। আমরা যেন লিলি চৌধুরীর অবদানকে ভুলে না যাই।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘লিলি চৌধুরী এমন সময়ে অভিনয়ে এসেছিলেন, যখন আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীদের এই অভিনয়ে আসাটা ছিল লড়াইয়ের মতো। সাম্প্রদায়িকতা উপেক্ষা করে যে কয়েকজন সংস্কৃতিতে ভূমিকা রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে লিলি চৌধুরী অন্যতম। তিনি অন্যদের অনুপ্রাণিত করেছেন। নারীদের অভিনয়জগতের পথপ্রদর্শক তিনি।’

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের উদ্যোগে লিলি চৌধুরীর প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের আয়োজন
ছবি: সাইফুল ইসলাম

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ৫০ বছর আগে বিজয়ের মাসে মুনীর চৌধুরীকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদাররা। আর ৫০ বছর পরে লিলি চৌধুরী স্বাধীনতার মাসে চলে গেলেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত এই পরিবারের ভূমিকা ছিল। লিলি চৌধুরীকে রাষ্ট্রীয় কোনো পুরস্কার না দেওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন শাহরিয়ার কবির। তিনি এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কার লিলি চৌধুরীকে দেওয়ার জন্য সরকারে কাছে দাবি জানান।

নাট্যজগতে লিলি চৌধুরীর ভূমিকার কথা উল্লেখ করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, রাষ্ট্র ও জনগণ যখন অস্বস্তিকর সময় পার করছিল, তখন বাতিঘর হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন লিলি চৌধুরীর মতো মানুষেরা। মুনীর চৌধুরী ও লিলি চৌধুরীর কাছে জাতি কৃতজ্ঞ। তাঁদের সন্তানেরাও সমাজে অবদান রাখছেন।

লিলি চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তাঁর মা পরিবারের ছায়া হয়ে ছিলেন। মানুষ যেন লিলি চৌধুরী সম্পর্কে আরও জানতে পারে, তাঁরা সে চেষ্টা করবেন।

লিলি চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার, নাট্যকার আবদুল্লাহ আল মামুন, আবৃত্তিশিল্পী ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, উদীচীর সহসাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহাসহ প্রমুখ।

এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে লিলি চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।