শহীদ আজাদের বুকের রক্ত ও মায়ের অশ্রু দিয়ে লেখা ‘মা’

‘যখন ছোট ছিলাম, আমরা ম্যাক্সিম গোর্কির মা পড়েছিলাম। এখন আমাদের কত আনন্দ, কত গৌরব! এখন আমরা বলতে পারি, আমাদের বাংলাদেশের, আমাদের বাঙালিদের একটা মা আছে, সেটি আনিসুল হকের লেখা।’

এসব কথা বলেছেন জনপ্রিয় লেখক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল। মা উপন্যাসের ১০০তম মুদ্রণ উপলক্ষে শুক্রবার অনলাইনে আয়োজিত প্রকাশনা উৎসবে এসব কথা বলেন তিনি। এতে আরও অংশ নেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সময় প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ ও বাতিঘরের প্রধান নির্বাহী জাফর আহমদ।

অনুষ্ঠানে সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, ‘মা উপন্যাসের ১০০তম মুদ্রণ বা বিশেষ সংস্করণ আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। বইটি শহীদ আজাদ বুকের রক্ত দিয়ে লিখেছেন। তাঁর মা অশ্রু দিয়ে লিখেছেন। আমি শুধু মাধ্যম হিসেবে প্রকাশ করেছি।’

তবে একটি বইয়ের ১০০তম মুদ্রণ অন্য রকম গৌরবময় বলে মত দেন শামসুজ্জামান খান। তিনি বলেন, আজাদের মা ছিলেন আদর্শিক চিন্তাচেতনার দিক থেকে গভীরতম বাঙালি। তিনি ছিলেন ধার্মিক। তিনি নামাজ পড়েন, পবিত্র কোরআন শরিফ পড়েন।

পুত্রের প্রতি তাঁর অসাধারণ ভালোবাসা। একমাত্র পুত্র বলে ভালোবাসাটা অনেক বেশি।

সেই মাকে রূপান্তর করতে লেখক যে জায়গায় গেছেন, তা অসাধারণ।

নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, ‘জাহানারা ইমাম যেমন আমাদের সবার মা, সামাজিকভাবে আন্দোলন-সংগ্রামের মা, তেমনি আনিসুল হকের মা উপন্যাসের আজাদের মা সবার মা হয়ে উঠেছেন। আমরা ব্যক্তি ও সমষ্টিগতভাবে আরেকজন মাকে যুক্ত করতে পেরেছি। যাঁর সাহস, আদর্শিক অবস্থান শুধু জাতির বিবেক ও ইচ্ছাশক্তিকে সুদৃঢ় করেনি, সামগ্রিকভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে উপন্যাসটি।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের যে না–বলা কথাগুলো, যেগুলো বলতে পারিনি, সে কথাগুলো বলেছেন আনিসুল হক।’

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রথম আলো বন্ধুসভার জাতীয় পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক মৌসুমি মৌ। এতে জানানো হয়, ২০০২ সালে প্রথম আলোর ঈদসংখ্যায় প্রথমবারের মতো মা উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

পরে এটি বাংলা ভাষার পাশাপাশি ওডিশি, স্প্যানিশ ও ইংরেজি ভাষায়ও প্রকাশিত হয়। ভারতের কলকাতায়ও প্রকাশিত হয় আলাদা সংস্করণ। এখন উপন্যাসটি সুইডিশ ভাষায় অনূদিত হয়ে প্রকাশের অপেক্ষায় আছে।