শাহবাগে গান ও কবিতায় ধর্ষণের প্রতিবাদ

নাট্যদল বটতলা ‘আর নয় চুপ থাকা’ শীর্ষক পথনাটক পরিবেশন করেপ্রথম আলো

দেশে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ সোমবার অষ্টম দিনের মতো প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও বাম ঘরানার ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুরু হয় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক আয়োজন। ‘ধর্ষণ ও বিচারহীনতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ লেখা ব্যানার নিয়ে তাঁরা প্রতিবাদ করেন।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, দেশে ধর্ষণের ঘটনায় বিচার না হওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বা সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করার সৎ সাহস নেই। গত এক বছরে দেশে যত ধর্ষণ হয়েছে, সেগুলোর বিচার হয়নি। এই জনবিচ্ছিন্ন সরকার আবার প্রমাণ করল তারা বিচারহীনতার সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতা করে। বিচারব্যবস্থায় যে ফাঁক আছে, তা আবার প্রমাণিত হলো।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় প্রথম আলোকে বলেন, আইন করে, সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখে ধর্ষণের অপরাধ বন্ধ করা যাবে না। এর জন্য পরিবেশের পরিবর্তন করতে হবে। সে উদ্যোগ সরকারের নেই। প্রশাসন দায়সারা গোছের একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি বলেন, ধর্ষণের সংজ্ঞা ও সাক্ষ্য আইনের সংস্কার করে আইন সংশোধনের দাবির কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ধোঁয়াশা তৈরি করা হয়েছে। ধর্ষণের প্রতিবাদে এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।

দেশে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনায় দোষীদের বিচারের দাবিতে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বাম ঘরানার ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ
প্রথম আলো

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর গণসংগীতের মধ্য দিয়ে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। তারা আকাশ চক্রবর্তীর লেখা ‘চিৎকার করো মেয়ে দেখি কত দূর গলা যায়, আমাদের শুধু মোমবাতি হাতে নীরব থাকার দায়’ গানটি পরিবেশন করে।

এরপর রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ শীর্ষক কবিতা আবৃত্তি করেন প্রগতি লেখক সংঘের পক্ষে মাহবুবুল হক।
নজরুলগীতি ‘জাগো নারী জাগো বহ্নিশিখা’ দলগতভাবে পরিবেশন করেন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্যরা। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সংকোচের বিহ্বলতা’ গান পরিবেশন করেন তাঁরা।

সলিল চৌধুরীর লেখা গীতিকবিতা পরিবেশন করে ‘প্রতিবাদের ভাষা’।

উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ‘সামলে রাখো হাল, এখন ঢেউ বড় উত্তাল; অজাত রাত্রি ভাসব এবার, সাক্ষী মহাকাল’ শীর্ষক গান পরিবেশন করে।

গানের দল মাভৈ গণসংগীত পরিবেশন করে। এরপর নাট্যদল বটতলা ‘আর নয় চুপ থাকা’ শীর্ষক পথনাটক পরিবেশন করে।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার ফাঁকে চলছিল বিক্ষোভ স্লোগান। তাঁরা ‘ধর্ষক লীগের আস্তানা ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার মাটি আমার মা, ধর্ষকদের হবে না’, ‘আমার সোনার বাংলায়, ধর্ষকদের ঠাঁই নাই’, ‘যে রাষ্ট্র ধর্ষক পুষে, সে রাষ্ট্র ভেঙে দাও’, ‘ধর্ষকদের কারখানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দেন।

কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের প্রভাবশালীরা জড়িত থাকে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কারণে ধর্ষণের ন্যায়বিচার পাওয়া থেকে ভিকটিমকে বঞ্চিত হতে হয়। এই সমস্যা রাজনীতি বা আইনের মধ্যে। তাই সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের চেয়ে দ্রুত বিচার করা জরুরি।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, নারীর মুক্তি ছাড়া কখনোই মানুষ এগোতে পারে না। এ দেশে অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু মানুষের মগজে মূল্যবোধ ও চেতনার জায়গায় পিছিয়ে আছে।

গানে, কবিতায় প্রতিবাদ
প্রথম আলো

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক প্রগতি বর্মণ বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে ভাঙতে হবে। যারা ধর্ষকদের পৃষ্ঠপোষক তাদেরও চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নয়তো এই রাষ্ট্রে বারবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার বলেন, ৯ দফার দাবির সমর্থনে আজকের এই সমাবেশ। সরকারের পক্ষ থেকে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বিধান রেখে আইন তৈরির কথা ঘোষণা হয়েছে, কিন্তু মৃত্যুদণ্ডের বিধান কি অপরাধ কমাতে পেরেছে, পারেনি। এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। তিনি বলেন, সাক্ষ্য আইন সংস্কার করা হচ্ছে না, সিডও সনদে সরকার স্বাক্ষর করছে না। আদালতে লাখ লাখ মামলা পড়ে আছে, বিচার হচ্ছে না।

এদিকে রাজধানীর ধানমন্ডি, মিরপুর-১০ গোল চত্বরেও আজ শিক্ষার্থীরা দেশে অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।