শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দুর্ভোগ নয়, স্বস্তির কারণ হবে

নিরাপদ সড়কের দাবিতে সরব শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

বাসে অর্ধেক ভাড়া (হাফ পাস) ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে কিছুদিন ধরেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার থেকে সদ্য উত্তীর্ণ হওয়া তকি তাহমিদ অমিয় একজন।

আন্দোলন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা জানিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. আব্দুল্লাহ আল হোসাইন

প্রশ্ন:

তিন বছরের ব্যবধানে আবার আপনারা নামলেন নিরাপদ সড়কে দাবিতে। ২০১৮ সালের দাবি কি পূরণ হয়নি তাহলে?

তকি তাহমিদ: আসলেই দাবি পূরণ হয়নি। ২০১৮ সালে বাসচাপায় নিহত হয় দুজন শিক্ষার্থী (আবদুল করিম ও দিয়া খানম ওরফে মিম)। দাবি যদি পূরণই হতো, তবে ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলার রায় কার্যকর হতো। এসব কারণেই পরিবহনশ্রমিকেরা পার পেয়ে যাচ্ছেন। তাঁদের ধারণা, ‘রাস্তায় মেরে ফেলব, আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যাব।’ আমরা দাবি জানিয়েছি, সরকারও বলছে হবে। কিন্তু আর পূরণ হয়নি। কারণ একদিন তো সবাই এসব ভুলে যাবে।

প্রশ্ন:

আন্দোলনকালে সড়কে কেন চালক ও গাড়ির লাইসেন্স পরীক্ষা করতে হচ্ছে? পুলিশ কি তাহলে ব্যর্থ?

তকি তাহমিদ: সেদিক থেকে বলতে গেলে পুলিশ ব্যর্থ নয়। তবে তাদের গাফিলতি আছে। পুলিশের পক্ষে চাইলেই সব সম্ভব। রাস্তায় দেখা যায় গাড়ির ফিটনেস সনদ নেই, তবে তারা তা ধরছে না। তারা ধরছে মোটরসাইকেল। আসলে তারা যাতে দ্রুত লাভবান (জরিমানা তোলায়) হয়, সে জন্য মোটরসাইকেল ধরছে। সিটি করপোরেশনের লোকজন কীভাবে গাড়ি চালাচ্ছে, লাইসেন্স আছে কি না, সেটা দেখার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু তারা তা দেখছে না। আসলে শুরুটা বিআরটিএ থেকে। তাদের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে লাইসেন্স দেওয়ার অভিযোগ আছে। এ জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। এখানে আসলে গোড়াতেই গলদ। সে জন্য রাস্তায় মৃত্যু দেখা যায়।

প্রশ্ন:

বেশ কয়েক দিন ধরে আন্দোলন চলছে। এবার কোনো সমাধান আসবে বলে মনে হয়?

তকি তাহমিদ: ২০১৮–এর আন্দোলনের পর সর্বশেষ অগ্রগতি রায় হওয়া। ফাঁসি হবে তাঁদের (দোষী ব্যক্তিদের)। আশা করব, এবার কর্তৃপক্ষের টনক নড়বে। গতবারের আন্দোলনের পর একটা জিনিসে খুব পরিবর্তন এসেছে, বাইকাররা (মোটরসাইকেলের আরোহী) হেলমেট পরছেন। অনেক বাসচালকও এখন লাইসেন্স রাখেন। এবারও হয়তো পরিবর্তন আসবে। একজন একজন করে মরছে মানুষ। জনগণ নয়, (বরং) এবার প্রশাসনের টনক নড়বে বলে আশা করছি।

প্রশ্ন:

সড়ক অবরোধ করে আন্দোলনের এ পদ্ধতি কতটুকু কাজে আসবে? এর বাইরে বিকল্প কোনো পন্থায় আন্দোলন করা যেত না?

তকি তাহমিদ: সড়ক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটাই সঠিক পন্থা বলে মনে করি। সবার দেখে টনক নড়বে। মানুষ বুঝবে আমরা রোডে চলছি, আমাদের জন্যই তো এমন আন্দোলন। তাদের একটু কষ্ট হলেও, ২০১৮–এর পর থেকে যত পরিবর্তন এসেছে, এবার আরও বেশি আসবে। এটা সাধারণ জনগণের দুর্ভোগ নয়, এটা তাদের স্বস্তির কারণ হবে। কারণ, প্রশাসনের সঙ্গে বসে কোনো কাজ (সমাধান) হয় না।

প্রশ্ন:

দীর্ঘদিন ধরে আপনাদের পক্ষে আন্দোলন চালানো সম্ভব? আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী?

তকি তাহমিদ: এবার হাফ পাস আন্দোলন শুরু হতে না হতেই শিক্ষার্থীদের ওপর আরেকটি জুলুম হচ্ছে গাড়ি চাপা দেওয়া। আসলেই আমার মনে হচ্ছে না, এ আন্দোলন ঝুলে যাবে। শিক্ষার্থীরা একত্র আছে। গতবারের আন্দোলন অনেক দিন ধরে ছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীরাও একত্র হয়েছিলেন। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো একত্র হননি। ভার্সিটির ছাত্ররা যোগ দিলে আন্দোলন আরও জমে উঠবে। যত দিন না প্রশাসন ঠিকভাবে বলবে, ‘আর আশ্বাস না, এবার সঠিক সমাধান’, তত দিন পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।