সবার স্বার্থ সুরক্ষা করে এলপিজির দাম ঘোষণা হবে: বিইআরসি

এলপিজির দাম নির্ধারণে বিয়াম মিলনায়তনে দিনভর গণশুনানি করে বিইআরসি
ছবি: প্রথম আলো

তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) একটি গ্রহণযোগ্য দাম নির্ধারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। কমিশন বলেছে, ২১ জানুয়ারির মধ্যে সবাই শুনানি–পরবর্তী লিখিত মতামত জানাতে পারবেন। এরপর ছোট পরিসরে একটি মতবিনিময় সভা করা হবে। সবার স্বার্থ সুরক্ষা করে এলপিজির দাম ঘোষণার আদেশ দেওয়া হবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে দিনভর গণশুনানি শেষে কমিশনের পক্ষে এমন ঘোষণা দেন বিইআরসির চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল। এর আগে এলপিজি সরবরাহকারী কোম্পানির প্রস্তাব, কারিগরি কমিটির মূল্যায়ন নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ যুক্তি–তর্ক উপস্থাপন করে। হাইকোর্টের আদেশে এলপিজির মূল্য পুনর্নির্ধারণে এ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

গৃহস্থালি রান্নার কাজে ব্যবহৃত এলপিজির ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ১ হাজার ২৫৯ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে বেসরকারি খাতের কোম্পানিগুলো। আর সাড়ে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম ৬০০ থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করার কথা বলেছে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি এলপি গ্যাস লিমিটেড (এলপিজিএল)। তবে বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে, বেসরকারি খাতে ৮৬৬ টাকা ও সরকারি খাতে এলপিজিএলের দাম ৯০২ টাকা করা যেতে পারে।

ব্যবসায়ী ও কমিশনের কারিগরি কমিটি প্রতি মাসে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তবে গণশুনানি ছাড়া দাম পরিবর্তনের বিষয়ে আইনগত এখতিয়ারের প্রশ্ন তুলেছে ক্যাব। কারিগরি কমিটি ২৪টি ও ক্যাব ১১টি সুপারিশ তুলে ধরেছে কমিশনের কাছে।

বেসরকারি খাতের চেয়ে সরকারি কোম্পানির এলপিজির দাম বেশি করার বিরোধিতা করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, দাম বেশি বা সমতায় আনার নামে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হবে। তাঁর এ বক্তব্যে একমত পোষণ করে এলপিজিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুর রহমান বলেন, বেসরকারির চেয়ে বেশি হলে তাদের সিলিন্ডার বাজারে বিক্রি হবে না। অতীতে একবার দাম বাড়িয়ে নেতিবাচক অভিজ্ঞতার মুখে পড়ে দাম কমাতে বাধ্য হয়েছেন।

বক্তব্যের শুরুতেই প্রথম আলোয় আজ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম উল্লেখ করে শামসুল আলম কমিশনের উদ্দেশে বলেন, বাধ্য না হলে কি কমিশন দাম নির্ধারণ করত না? ‘বাধ্য হয়ে এখন দাম নির্ধারণে বিইআরসি’ শিরোনামে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

জানা গেছে, বেসরকারি খাতে এলপিজির ব্যবসা শুরু হয় ২০ বছর আগে। কয়েক বছর ধরে বাজারে এর চাহিদা ও ব্যবসার বিস্তৃতি ব্যাপক বাড়ছে। কিন্তু দীর্ঘ সময়ে গ্রাহকের জন্য এলপি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করতে পারেনি বিইআরসি। পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থের খুচরা মূল্য নির্ধারণে একটি প্রবিধানমালার খসড়া তৈরি হয় ২০১২ সালে, যা আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত হয়নি। এখন প্রবিধানমালা ছাড়াই উচ্চ আদালতের আদেশে বাধ্য হয়ে দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিইআরসি।

ক্যাবের রিট আবেদনের ভিত্তিতে এক মাসের মধ্যে গণশুনানির মাধ্যমে দাম পুনর্নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে গত ২৫ আগস্ট নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। নির্ধারিত সময়ে তা করতে না পেরে আদালতে ক্ষমাও চায় বিইআরসি। ২০১৬ সালে ওই রিট করেছিল ক্যাব।

বিইআরসি গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি বলছে, বেসরকারি খাতে ৮৬৬ টাকা ও সরকারি খাতে এলপিজিএলের দাম ৯০২ টাকা করা যেতে পারে।

সরকারি প্রতিষ্ঠানের এলপিজির দাম বেশি করার বিরোধিতা করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা রুহিন হোসেন বলেন, রাষ্ট্রীয় খাতের দেওয়া প্রস্তাব বিবেচনা না করে দাম বাড়ানোর যে প্রস্তাব কারিগরি কমিটি দিয়েছে, তা মূলত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানকে বাজার থেকে উঠিয়ে দেওয়া প্রস্তাব।

আর গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এর আগেও কমিশনের আদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে তহবিল গঠন করা হয়েছে। সেই তহবিলের টাকা কোথায় ব্যবহৃত হয়েছে, তার তথ্য জানানো দরকার।

বেসরকারি খাতের প্রস্তাব তুলে ধরতে এলপিজি কোম্পানি ওমেরা, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, পেট্রোম্যাক্সের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা তাঁদের প্রস্তাবের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করেন। তবে ব্যবসায়ী ও কমিশনের কারিগরি কমিটি প্রতি মাসে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাবে একমত হয়েছে। তবে গণশুনানি ছাড়া দাম পরিবর্তনের বিষয়ে আইনগত এখতিয়ারের প্রশ্ন তুলেছে ক্যাব। কারিগরি কমিটি ২৪টি ও ক্যাব ১১টি সুপারিশ তুলে ধরেছে কমিশনের কাছে।

গণশুনানিতে বিচারক প্যানেলে চেয়ারম্যান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিইআরসির সদস্য মোহম্মদ আবু ফারুক, মকবুল ই ইলাহি চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান, মো. কামরুজ্জামান।