সাত মাসেই ভোটের দুই রূপ দেখলেন তিনি

শান্তিনগর বাজার কমিটির নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় অর্ধেক ভোট কম পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।

এনামুল হক
ফাইল ছবি

প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে দ্বিগুণ ভোটে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার মাত্র সাত মাস পর একটি বাজার কমিটির নির্বাচনে হেরে গেছেন এনামুল হক ওরফে আবুল। রাজধানীর আমিনবাগ কো-অপারেটিভ মার্কেট সোসাইটি লিমিটেডের (শান্তিনগর বাজার কমিটি) নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর চেয়ে প্রায় অর্ধেক ভোট কম পেয়েছেন এই কাউন্সিলর। তিনি পল্টন থানা আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।

২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে এনামুল হক সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভোট পেয়েছেন ২৪৩টি। আর বিজয়ী প্রার্থী মজিবুল হক পেয়েছেন ৪৮০টি ভোট। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ হাজার ৪০১ জন। ভোট দিয়েছেন ৭৬০ জন।

শান্তিনগর কাঁচাবাজারটি রাজধানীর পুরোনো ও বড় বাজারগুলোর একটি। বড় বাজার হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃত্ব পেতে তৎপর থাকেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তিন বছর পরপর বাজার কমিটির ভোট হয়। নির্বাচনে ১২টি পদের বিপরীতে এবার প্রার্থী ছিলেন ২৫ জন।

গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক ৫ হাজার ২৪৫ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর হন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী আব্বাস উদ্দিন সরকার পান ২ হাজার ৯৯ ভোট।

বাজার কমিটির ভোটে হেরে যাওয়ার বিষয়ে এনামুল হক দাবি করছেন, নির্বাচনে অনেক ম্যাকানিজম হয়েছে। অভ্যন্তরীণ কিছু খেলাধুলা ছিল। তাই তিনি জয়লাভ করতে পারেননি। তাঁর দাবি, নির্বাচনে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল অন্য গ্রুপের নিয়ন্ত্রণের জায়গাটাকে ভেঙে দেওয়া। তারা ৪০–৫০ বছর ধরে সেখানে রাজত্ব করছে। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নিয়ে আমি কেবল শুরু করেছি। কী হবে বলা যাচ্ছে না। এটাকে ছাড়া যাবে না।’

বাজার কমিটির সূত্রে জানা গেছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করার লক্ষ্যে নির্বাচনের দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সেখানে মোতায়েন করা হয়। ভোটে পুলিশ এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা ছিল।

নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, কাউন্সিলর আবুল কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছেন। তবে পুলিশ বাধা দেওয়ায় তিনি পিছু হটতে বাধ্য হন।

এ নির্বাচনে সভাপতি পদে বিজয়ী মো. মজিবুল হক স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, তবে দলীয় কোনো পদে নেই। গত মেয়াদেও তিনি সভাপতি ছিলেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ–প্রশাসনের শক্ত অবস্থানের কারণে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে। শান্তিনগর পুলিশ প্রশাসন যেভাবে নির্বাচন করিয়েছে, দেশের প্রতিটি এলাকায় যদি এভাবে নির্বাচন হয় তাহলে গণতন্ত্রের ধারা অব্যহত থাকবে।’

শান্তিনগর বাজারে পাঁচ শতাধিক দোকান রয়েছে। সার্ভিস চার্জসহ বিভিন্ন খাতে এসব দোকান থেকে বাজার কমিটি মাসে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা নেয়। বাজার কমিটির নির্বাচনে সম্পাদক পদে জয়ী হওয়া লোকমান হোসেন ফকির পল্টন থানা বিএনপির সভাপতি। গত মেয়াদেও বাজার কমিটির এই পদে ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, নির্বাচনে পুলিশের অসাধারণ ভূমিকা ছিল। ক্ষমতা দিয়ে সব হয় না, কখনো কখনো জনতাও লাগে, বাজারের নির্বাচনে তা প্রমাণিত হয়েছে। এ নির্বাচনে পুলিশ প্রমাণ করেছে তারা নিরপেক্ষ থাকলে দেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব।

একটি ওয়ার্ডের ভালো–মন্দের সব দায়িত্ব স্থানীয় কাউন্সিলেরর। এরপরও ওই ওয়ার্ডের বাজার কমিটির সভাপতি পদে কাউন্সিলরের নির্বাচন করা কতটা যৌক্তিক, এই প্রশ্নে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘ওয়ার্ডের সবচেয়ে মধুটা বাজারে। এটি হাতছাড়া হয়ে গেলে অনেক কিছু হাতছাড়া হয়ে যায়। বাজার আয়ের বড় জায়গা।’