সৃজন–মননের উৎসবের যবনিকা

বাংলা একাডেমির ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদের অমর একুশের বইমেলার যবনিকা নামল গতকাল বৃহস্পতিবার। জাতির মেধা, মনন, সৃজনশীলতা নিয়ে সবচেয়ে বড় এই আয়োজন সাধারণ মানুষের কাছে প্রাণের মেলা হিসেবেও সমাদৃত। বরাবর ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে শেষাবধি ২৮ বা অধিবর্ষে ২৯ দিনব্যাপী মেলা চলে। করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর মেলার সময় নড়চড় হয়ে গেছে। গত বছর শুরু হয়েছিল ১৮ মার্চ, শেষ হয় ১২ এপ্রিল। এবার শুরু হয়েছিল ১৫ ফেব্রুয়ারি, টানা ৩১ দিনের মাথায় শেষ হলো গতকাল।

বিক্রি কমেছে

মেয়াদ বাড়লেও বইয়ের বিক্রি বাড়েনি। বাংলা একাডেমির দেওয়া হিসাব অনুসারে, এবার মেলায় বিক্রি হয়েছে ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে সর্বশেষ ২০২০ সালের মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৮২ কোটি টাকা। এবার বাংলা একাডেমির নিজস্ব বইয়ের বিক্রিও কমেছে। এবার ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে, ২০২০ সালে বিক্রি ছিল ২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি, অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা, প্রতীক প্রকাশনীর প্রকাশক ফাহিমা সুলতানা, স্বপ্ন ’৭১–এর নবীন প্রকাশক আবু সাঈদ, ঐতিহ্যের ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান, প্রথমা প্রকাশনের ব্যবস্থাপক জাকির হোসেনসহ অনেক প্রকাশক ও বিক্রয় ব্যবস্থাপকেরা জানালেন, মেলার প্রথমার্ধে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতে বিক্রির পরিমাণ যেমন ছিল, পরে মার্চে সেই ধারাবাহিকতা আর থাকেনি। এই মেলার সঙ্গে ভাষার মাসের যে আবেগ আছে বই বিক্রির ক্ষেত্রে তা বড় ভূমিকা রাখে। ফেব্রুয়ারির পরে লোকে সাধারণত বেড়ানোর উদ্দেশ্য নিয়েই মেলায় এসেছেন। ছুটির দিন ছাড়া অন্য দিনগুলোয় বিক্রির পরিমাণ ছিল খুব কম। এ ছাড়া করোনার একটি প্রভাব আছে। এসব মিলিয়েই এবার বিক্রি কমেছে। তবে শেষ পর্যন্ত মাসব্যাপী মেলা হয়েছে এতেই তাঁরা সন্তুষ্ট।

তিন সহস্রাধিক নতুন বই

সমাপনী দিনেও মেলায় ১৯২টি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলা একাডেমির তথ্যকেন্দ্রের হিসাব অনুসারে, এবার মেলায় নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ৩ হাজার ৪১৬টি। বয়ে গেছে কাব্যের জোয়ার। ১ হাজার ৬০টি কাব্যগ্রন্থ নিয়ে কবিরাই প্রকাশনার শীর্ষে।

সমাপনী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল একাডেমির মাঠের মূলমঞ্চে। প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা, প্রতিবেদন পাঠ করেন মেলার সদস্যসচিব জালাল আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন।

সন্ধ্যার পর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে স্বাধীনতাস্তম্ভের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির পক্ষ থেকে ১০২টি কেক কাটা হয়। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন। এই আনন্দঘন আয়োজনের ভেতর দিয়ে শেষ হলো বইমেলার আয়োজন। জ্যোৎস্নার আলো গায়ে মেখে গ্রন্থানুরাগীরা ফিরে গেলেন আগামী দিনে আবারও এমন আয়োজনে মিলিত হওয়ার আশা নিয়ে।