স্পনসর বানানোর নামে ‘চাঁদাবাজি’

খেলার প্রতিযোগিতায় স্পনসর বানানোর নামে চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ডিএনসিসির ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি এম শামীমের বিরুদ্ধে।

প্রতীকী ছবি

খেলার প্রতিযোগিতায় স্পনসর বানানোর নামে চিঠি দিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেরশনের (ডিএনসিসি) ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি এম শামীমের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী স মিল মালিকদের অভিযোগ, স্পনসর মনোনীত করা হয়েছে, এমন চিঠি দিয়ে চাঁদা চাওয়া হচ্ছে।

তবে অভিযোগের বিষয়ে কাউন্সিলর ডি এম শামীম বলছেন, ওয়ার্ডের সবাইকে নিয়ে আলোচনায় বসে দল পরিচালনায় একটি অর্থ সংস্থান ও ব্যয় উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির মাধ্যমেই বিত্তশালী ও ব্যবসায়ীদের চিঠি দিয়ে উদারভাবে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কাউকে চাপ দেওয়া হচ্ছে না।

ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো ডিএনসিসি মেয়র’স কাপ-২০২১–এর আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় ডিএনসিসির প্রতিটি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর ফুটবল ও ক্রিকেট দল এবং নারী কাউন্সিলর ভলিবল দল গঠন করবেন। গত ২৪ ডিসেম্বর এ প্রতিযোগিতার ফুটবল খেলা শুরু হয়েছে।

প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী দল পরিচালনার খরচ কাউন্সিলরকেই জোগাড় করতে হবে বলে জানিয়েছেন মেয়রের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিটি দলের জন্য দুটি স্পনসর নেওয়া যাবে। তবে অবশ্যই স্পনসরের নাম বা লোগো ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক দলকে ‘টোকেন মানি’ বাবদ দেড় লাখ করে টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

স্পনসর মনোনীত করে স মিল মালিকদের অর্থ সংস্থান ও ব্যয় উপকমিটির নামে দেওয়া চিঠিতে লেখা, স্পনসরসহ প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আলোচনা করে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও বিত্তবানদের স্পনসর করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই আলোকে আপনাকে বা আপনার প্রতিষ্ঠানকে স্পনসর হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। উপকমিটির সভাপতি হচ্ছেন সাবেক দক্ষিণখান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম। সদস্যসচিবের দায়িত্বে আছেন ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব মেহেদী হাসান।

ওই চিঠি পেয়েছেন এমন তিনটি মিলের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা সবাই মিলে আড়াই লাখ টাকা কাউন্সিলরের হাতে দিয়েছিলেন। কাউন্সিলর তা নেননি। পরে নিজের জমিতে থাকা মিলমালিকদের কাছ থেকে জোর করে ২৫ হাজার করে চাঁদা নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মিলমালিক প্রথম আলোকে বলেন, মালিকেরা সাধ্যমতো যে টাকা দিয়েছিলেন, সেটা গ্রহণ করা হয়নি। চিঠিতে উল্লেখ না থাকলেও তাঁরা মুখে মুখে চাঁদার পরিমাণ নির্ধারণ করে মালিকদের জানিয়েছেন। এটা চাঁদাবাজির শামিল।

কাউন্সিলর কার্যালয়ের থেকে প্রথম আলোকে জানানো হয়, খেলোয়াড়দের উপকরণ ও অনুশীলন বাবদ এখন পর্যন্ত ৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বিপরীতে সহায়তা এসেছে ৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এ হিসাবে ঘাটতি আছে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

চাঁদাবাজির বিষয়ে ঢাকা উত্তর স মিল মালিক সমিতির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, করোনায় ব্যবসা বন্ধ ছিল। অনেক মিলমালিকের আর্থিক অবস্থা খারাপ। কর্মীদের ঠিকমতো বেতন দিতে পারছেন না কেউ কেউ। এ পরিস্থিতিতে কাউন্সিলর যেভাবে চাচ্ছেন, সেভাবে চাঁদা দেওয়ার সামর্থ্য অনেক মালিকের নেই। এটা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে কাউন্সিলরের লোকজন বলেছেন, ‘কোন মিল মালিক কত দিয়েছেন, কারা দেননি—এসবের তালিকা দেন। দেখেন কীভাবে টাকা আদায় করতে হয়?’

মিল মালিক সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউন্সিলরের লোকজনের চাপাচাপিতে মিলমালিকেরা আড়াই লাখ টাকা নিয়ে গিয়েছিলেন। টাকাটি তিনি রাখেননি। বরং অনেকটা অবজ্ঞার সুরে মালিকদের বলে দিয়েছেন, ভবিষ্যতে আসবেন, আপনাদের বিষয়টাও তখন আমি দেখব।’

আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, এরপর কাউন্সিলর তাঁর জমিতে থাকা ছয়টি মিলের মালিকদের কাছে ২৫ হাজার করে চাঁদা দাবি করেন। না দিলে তিন মাসের মধ্যে জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়। ওই ছয়জন মিলমালিক নিরুপায় হয়ে ২৫ হাজার করে দেড় লাখ টাকা কাউন্সিলরকে দিয়েছেন।

তবে কাউন্সিলরের জমিতে থাকা ওই ছয়টি মিলের মালিকদের স্বাক্ষরিত একটি লিখিত বিবৃতি কাউন্সিলর কার্যালয় থেকে প্রথম আলোকে দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা, ‘আমরা স্ব উদ্যোগে ক্রীড়াবিদদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অনুশীলন ব্যয় নির্বাহের জন্য স্বেচ্ছায় অনুদান প্রদান করেছি।’

মিলমালিকদের টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কাউন্সিলর শামীম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বড় বড় ৩৬ জন মিলমালিক মিলে মাত্র আড়াই লাখ টাকা দিলে খেলার ব্যয় চালাব কীভাবে? এ কারণে একটু কষ্ট পেয়েছি। কারণ, তাঁদের কাছে অন্তত পাঁচ লাখ টাকা প্রত্যাশা করেছিলাম। মিলমালিকেরা তাঁদের সমস্যার কথা জানানোয়, তাঁদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। রাগান্বিত হওয়া বা চাপ সৃষ্টির কিছু হয়নি।’

নিজের জায়গায় থাকা মিলের মালিকদের কাছ থেকে চাপ দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ঈর্ষান্বিত হয়ে সমাজের কিছু কীট আমার সম্মানহানি করতে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।’