স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র হচ্ছে বাংলাদেশের জন্মসনদ: আমীর-উল ইসলাম

বিশিষ্ট আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম
ফাইল ছবি

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের রচয়িতা এবং সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী আমীর-উল ইসলাম বলেছেন, নতুন কোনো জাতি সৃষ্টি হলে তার দলিল থাকে। বাংলাদেশের যে জন্ম, উৎপত্তি, তার মৌলিক দলিল হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। পৃথিবীতে খুব বেশি এ রকম দলিল নেই। এটা বাংলাদেশের জন্মসনদ।

আজ রোববার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশের গণপরিষদের ৫১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন এবং ‘বাংলাদেশের গণপরিষদের কার্যবিবরণী ও প্রাসঙ্গিক তথ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে আলোচনা অনুষ্ঠানে আমীর-উল ইসলাম এসব কথা বলেন। র‌্যামন পাবলিশার্স আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে এই প্রখ্যাত আইনজীবীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ’ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার ওপর ভিত্তি করে সেই ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণা করেন আমীর-উল ইসলাম।

স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র নিয়ে তেমন কোনো কাজ না হওয়ায় আফসোস প্রকাশ করেন এই আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘বাঙালি জাতি অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ইতিহাসের জায়গাকে আরও সমৃদ্ধ করতে হবে। শুধু অর্থসম্পদই যথেষ্ট নয়। সবচেয়ে বড় সম্পদ শিক্ষা। শিশু-কিশোরদের জন্য আমরা পাঠ্যপুস্তকে কী সম্ভার তৈরি করছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রই সংবিধানের মৌলিক ভিত্তি। এটি সব স্কুল-কলেজে কার্যকর করতে হবে।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। তিনি বলেন, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান নিয়ে গবেষণা করবেন, তাঁদের জন্য বইটি খুব প্রয়োজনীয় হবে। বইটিতে সে সময়কার বিভিন্ন ঘটনা উঠে এসেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও ইতিহাসকে নিয়ে যেমন মিথ্যাচার হয়েছে, তেমনি সংবিধান প্রণয়ন নিয়েও প্রচুর মিথ্যাচার হয়েছে। এই বইয়ের কার্যবিবরণী পড়লে সেই মিথ্যাচারের ধোঁয়াশা কেটে যায়।

বাংলাদেশের রাজনীতির দর্শনকে ধারণ করতে চাইলে সংবিধানের মৌলিক বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে বলে জানান বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া। তিনি বলেন, সুবিধাবাদীদের সংমিশ্রণ ঘটানো হলে তাহলে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয় না। এখন আপসের দিকে এগিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন লুটেরাদের ধনিক শ্রেণির স্বর্গে পরিণত হয়েছে। সমাজ সাম্প্রদায়িকতার দিকে চলে গেছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সদস্য আনোয়ার হোসেন বলেন, গণপরিষদের কার্যবিবরণীর মধ্যেও বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখতে পাওয়া যায়। সে সময়েও মতের মিল-অমিল ছিল। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এই সংবিধান শুধু আওয়ামী লীগের নয়, এটা সবার।

প্রবীণ বাম নেতা দাউদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ‘বাংলাদেশের গণপরিষদের কার্যবিবরণী ও প্রাসঙ্গিক তথ্য’ গ্রন্থের সম্পাদক আবুল খায়ের, র‌্যামন পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ রহমত উল্লাহ প্রমুখ।