স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সামনে এসটিএস

এক ব্যক্তির দান করা জমিতে মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করে সরকার। সেখানে এখন এসটিএস নির্মাণ করছে ডিএসসিসি।

মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের সামনে এসটিএস নির্মাণের কাজ চলছে। গত ২৩ এপ্রিল রাজধানীর ডেমরার পূর্ব ডগাইর এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

দুস্থ ও অসহায় মানুষ যাতে বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পান, এ জন্য সরকারকে ৪৮ শতাংশ জমি দিয়েছিলেন রাজধানীর ডেমরার বাসিন্দা রুস্তম আলী। তাঁর চাওয়া অনুযায়ী সে জমিতে ১৯৭৭ সালে মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র নির্মাণ করে সরকার। সম্প্রতি ওই কেন্দ্রের আঙিনায় অন্তর্বর্তীকালীন বর্জ্য স্থানান্তর কেন্দ্র (এসটিএস) নির্মাণের কাজ শুরু করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।

গত শনিবার দেখা গেছে, কেন্দ্রটির এক পাশে এসটিএসের মেঝে নির্মাণের কাজ শেষ। কেন্দ্রের জরাজীর্ণ ভবনে থাকছেন এসটিএসের নির্মাণশ্রমিকেরা। এ ছাড়া সেখানে মাতুয়াইল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র পুনর্নির্মাণের নির্ধারিত স্থান—এমন সাইনবোর্ডও ঝুলছে। পাশাপাশি আদালতের একটি আদেশ, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি নোটিশ টাঙানো।

কেন্দ্রের জন্য জমিদানকারী রুস্তমের দুই ছেলের কাছ থেকে পাওয়া নথি অনুযায়ী, গত বছরের নভেম্বরে কেন্দ্রটির সামনে এসটিএস না করতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ থেকে লিখিতভাবে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল।

এ ছাড়া গত বছরেরই সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রটি পুনর্নির্মাণের জন্য সরকার থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তেজগাঁও থানা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় থেকে লিখিতভাবে মেয়রকে জানানো হয়েছিল। গত মার্চে একটি রিট আবেদনের পর আদালত থেকেও ছয় মাসের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এসব আমলে নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের বরাত দিয়ে সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের জায়গা-জমি করপোরেশনে ন্যস্ত হয়। জনকল্যাণে ওয়ার্ডভিত্তিক এসটিএস নির্মাণ করা হচ্ছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে করপোরেশন যথার্থ মনে করেছে বলেই সেখানে এটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

তবে রুস্তম আলীর দুই ছেলে রওশন আলী ও শওকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, সরকারকে দেওয়া জমির দানপত্রে তাঁর বাবা উল্লেখ করেছিলেন, যে উদ্দেশ্যে জমি দান করা হয়েছে, সরকার যদি সেভাবে ব্যবহার না করে, তাহলে তাঁর উত্তরসূরিরা জমির মালিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

কেন্দ্রটি নির্মাণের জন্য মৃত্যুর এক বছর আগে ১৯৭৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসককে ডেমরার পূর্ব ডগাইর এলাকায় নিজের জমি দান করেছিলেন রুস্তম আলী। এরপর সেখানে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রটি চালু করা হয়। জলাবদ্ধতার কারণে কেন্দ্রটি কয়েক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এরপর সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ সেখানে ময়লার ভাগাড় নির্মাণের কাজ শুরু করেছে।

এ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাঁরা বলছেন, একই এলাকায় অন্তত ৬২টি স্থানে সরকারের খাসজমি আছে। এসব জমির মধ্যে কিছু দখল হয়েছে। কিছু পরিত্যক্ত। সেগুলো উদ্ধার করে এসটিএস নির্মাণ না করে হাসপাতালের আঙিনায় করার কোনো যুক্তি নেই।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রটি একসময় ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ছিল। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এটি ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডে পড়েছে। রুস্তম আলীর স্বজনেরা বলছেন, ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আ. মতিন সাউদ করপোরেশনের মেয়রকে ভুল বুঝিয়ে হাসপাতালের সামনে এসটিএস নির্মাণের কাজ অনুমোদন করে নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে মতিন সাউদ প্রথম আলোকে বলেন, যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা সত্য নয়। তাঁর নিজ স্বজনেরাও সেখানে এসটিএস নির্মাণকাজে বাধা দিয়েছেন।

এসটিএস নির্মাণ করতে তাঁর কোনো পরামর্শ নেওয়া হয়নি বলেও দাবি করেন মতিন। তিনি বলেন, এখন এ বিষয়ে তাঁর কিছুই করার নেই। তাঁর নিজেরও সীমাবদ্ধতা আছে।