‘স্যার, অবস্থা বেশি ভালো না তাড়াতাড়ি হলে আসেন’

আবরার ফাহাদ
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় আরও দুজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা হলেন বুয়েট উপাচার্যের তৎকালীন একান্ত সচিব কামরুল হাসান ও শেরেবাংলা হলের নিরাপত্তারক্ষী মো. মোস্তফা। এই দুজনের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে মামলার ৩৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো।

আগামী রোববার মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১–এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।

নিরাপত্তারক্ষী মোস্তফা আদালতকে বলেন, গত বছরের ৬ অক্টোবর রাত ১০টা থেকে তিনি নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে ছিলেন। রাত দুইটার দিকে বুয়েটছাত্র মেহেদী হাসান ওরফে রবিন (আসামি) তাঁর কাছে আসেন। তিনি হলের প্রভোস্ট, হলের সুপারভাইজারকে ফোন দিতে বলেন। মেহেদীর কাছে তিনি জানতে চান, কেন ফোন দিতে হবে? তখন মেহেদী তাঁকে বলেছিলেন, হলে তারা একজন জামায়াত-শিবির ধরেছেন। তিনি আছেন হলের ২০০৫ নম্বর কক্ষে।

এরপর প্রথমে তিনি হলের সুপারভাইজারকে ফোন দেন। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। এরপর তিনি হলের সহকারী প্রভোস্টকে ফোন করে বলেন, ‘স্যার একজন ছাত্র বলছে, হলে তারা জামায়াত-শিবিরের একজনকে ধরেছে। এখন সে হলেই আছে।’ এই কথা বলার পরপরই তিনি দেখতে পান হলের দ্বিতীয় তলায় কয়েকজন ছাত্র আরেক ছাত্রকে শুইয়ে রাখেন।

এই দৃশ্য দেখে নিরাপত্তারক্ষী মোস্তফা সহকারী প্রভোস্টকে পুনরায় ফোন দেন এবং বলেন, ‘স্যার, অবস্থা বেশি ভালো না তাড়াতাড়ি হলে আসেন।’ এরপর হলের প্রভোস্টসহ অন্য স্যাররা আসেন। পুলিশ সদস্যরাও আসেন। স্যারদের উপস্থিতিতে হলে নিহত ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ।

নিরাপত্তারক্ষী মোস্তফা আদালতকে আরও বলেন, আবরার ফাহাদের কপালে, হাতে, কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত জখম দেখতে পান। কোমর থেকে পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত জখম দেখেন। হলের কক্ষ থেকে পাঁচটি ক্রিকেট স্টাম্প, দড়ি, চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

আরেক সাক্ষী কামরুল হাসান আদালতকে বলেন, রাত ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ কেন্দ্রের পরিচালক মিজানুর রহমান তাঁকে ফোন দেন। পরে বাসার সামনে একজন নিরাপত্তারক্ষীকে তিনি দেখেন। ওই নিরাপত্তারক্ষী তাঁকে জানান, বুয়েটের শেরেবাংলা হলে সমস্যা হয়েছে। উপাচার্য স্যার তাঁকে শেরেবাংলা হলে যেতে বলেছেন। পরে তিনি শেরেবাংলা হলে যান। দেখেন, একজন ছাত্রকে স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে হলের প্রভোস্টসহ অন্যরা তখন উপস্থিত ছিলেন।

বুয়েটের চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, ওই ছাত্র আগেই মারা গেছেন। তখন তিনি খবরটি উপাচার্যকে জানান। উপাচার্য তাঁকে ঘটনাটি পুলিশকে জানাতে বলেন। পরে পুলিশ আসার পর তাঁদের উপস্থিতিতেই নিহত ছাত্র আবরারের লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে এই মামলা পরিচালনা করছেন আবু আবদুল্লাহ ভূঁইয়া, আবদুস সোবহান তরফদার, প্রশান্ত কুমার কর্মকার, মিজানুর রহমান, আলমগীর হোসেন, শহিদুল ইসলাম ও মশিউর রহমান। আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করছেন আমিনুল গনি, আজিজুর রহমান, ফারুক আহমেদ প্রমুখ।

গত বছরের ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ মামলায় গত বছরের ১৩ নভেম্বর বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। গত ২১ জানুয়ারি অভিযোগপত্রটি আমলে নেন আদালত।

তিন আসামি পলাতক। গত ২ সেপ্টেম্বর বুয়েটছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েটের ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগপত্রে বলা হয়, পরস্পর যোগসাজশে পরস্পরের সহায়তায় শিবির সন্দেহে আবরারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়।