সড়ক আইন নিয়ে যেন আর 'টালবাহানা' না হয়: ইলিয়াস কাঞ্চন

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ইলিয়াস কাঞ্চন। শাহবাগ, ঢাকা, ১৫ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এক মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ইলিয়াস কাঞ্চন। শাহবাগ, ঢাকা, ১৫ নভেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

নতুন সড়ক পরিবহন আইন আজ শুক্রবার থেকেই কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। ১ নভেম্বর থেকে আইনটি কার্যকর করার কথা থাকলেও পরে তা দুই সপ্তাহ পেছানো হয়। এটি নিয়ে আর ‘টালবাহানা’ না করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নব্বইয়ের দশকের এই জনপ্রিয় চলচ্চিত্র অভিনেতা।

রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে আজ শুক্রবার সকালে এক মানববন্ধনে এই আহ্বান জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। গত ১৮ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে সড়ক দুর্ঘটনায় পপি ত্রিপুরা নামের এক নারীর মৃত্যুর বিচারের দাবিতে ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরাম, বাংলাদেশ ত্রিপুরা খ্রীষ্টিয়ান স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘২৬ বছর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলাম। পপি ত্রিপুরার জন্য আজকে এখানে দাঁড়াতে হবে, তা আমি আশা করিনি। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় অজস্র প্রাণ ঝরে যাচ্ছে। নতুন আইনটি সত্যিকার অর্থে কার্যকর করা হলে সড়ক দুর্ঘটনা ৭০ ভাগ কমিয়ে আনা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি। যে আইনটি প্রধানমন্ত্রী ১ নভেম্বর থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেটি নিয়ে যেন আর টালবাহানা না হয়। আজ থেকেই আইনটি বলবৎ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, নতুন সড়ক আইনটি অনেক বেশি কঠিন হয়ে গেছে। জরিমানা এবং শাস্তি কমিয়ে দিলে যেন আরও বেশি বেশি মানুষ মারতে পারেন, তাঁরা কি সেটি আশা করছেন? আমরা তো আরও কঠোর শাস্তি চেয়েছিলাম। আমাদের দাবি পরিপূর্ণভাবে পূরণ হয়নি। কিন্তু এরপরও যেটি এসেছে, আশা করব অনতিবিলম্বে পুরোপুরিভাবে সেটি কার্যকর করা হবে। দীর্ঘদিনের আন্দোলনের ফল নতুন এই আইনটি ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা দুই সপ্তাহ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি চাই না, আর একটি ঘণ্টা বা একটি মিনিটও এটি পেছানো হোক।’

সড়ক দুর্ঘটনায় পপি ত্রিপুরার মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠনের দাবি জানান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের একজন, আইনজীবী, পুলিশের মধ্য থেকে একজনকে নিয়ে অন্তত তিন-চারজনের একটি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে যেন পপি ত্রিপুরা হত্যার বিচার করা হয়।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘যখন নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তখনই পপি ত্রিপুরার হত্যাকাণ্ড ঘটল। এটাকে কি আমরা নিছক দুর্ঘটনা বলব? নতুন সড়ক আইনের আওতায় পপি ত্রিপুরাকে চাপা দেওয়া গাড়ির চালকের মৃত্যুদণ্ড হওয়া দরকার। পপি রিকশা থেকে পড়ে যাওয়ার পরও তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। মৃত্যু ঘটতে পারে জেনেও গায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে ওই চালক পপিকে হত্যা করেছেন। সেই চালকের কোনো লাইসেন্স ছিল না। গাড়িটির ফিটনেস সার্টিফিকেট ছিল কি না, তা–ও জানি না।’

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বক্তব্য দেন। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও অভিভাবকেরা মানববন্ধনে অংশ নেন৷

১ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আইনটির প্রয়োগ এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেন। সেই সময় শেষ হওয়ার আগে আগে আরও এক সপ্তাহ সময় বাড়ানো হয়। সেই সময়সীমাও শেষ হয়েছে।