হট্টগোল-বিশৃঙ্খলায় শেষ হলো ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন

ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। টিএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা ছিল বেলা ১১টায়৷ কিন্তু শুরু হয় বেলা দেড়টার পর৷ অনুষ্ঠানে আসা বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুক্ষণ পরপরই চলছিল কথা-কাটাকাটি৷ বেলা দুইটার দিকে আনন্দ শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিলেও তা শুরু হতে সময় লেগে যায়৷ কে পতাকা ধরবেন, কারা কীভাবে দাঁড়াবেন—এ নিয়ে বারবার মাইকে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল৷

এমনই হট্টগোল-বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উদ্‌যাপিত হয়েছে ছাত্র অধিকার পরিষদের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী৷ সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, গতকাল বুধবার রাজধানীর পল্টনে গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খানের ওপর যুব অধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রবিউল ইসলামের হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে এমন বিশৃঙ্খলা ছিল প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনটিতে৷

আজ বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) সামনে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্‌যাপন অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ এরপর পায়রা ওড়ান সংগঠনের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান ও বর্তমান সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা৷ পরে সবাই মিলে কেক কাটেন৷ এরপর টিএসসির সামনে পরিষদের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য দেন।

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান চলাকালে টিএসসির সামনে ছাত্র অধিকার পরিষদের কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হতে দেখা যায়৷ কেক খাওয়া শেষে বেলা দুইটার দিকে টিএসসির সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করার প্রস্তুতি নেন পরিষদের নেতা-কর্মীরা৷ এ পর্যায়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের কিছু নেতা-কর্মীর মধ্যে আরেক দফা বাগ্‌বিতণ্ডা হলে অন্যরা তাঁদের থামান৷ মিছিলের সারি ও পতাকা ধরা নিয়ে এ সময় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়৷ একপর্যায়ে পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তারেকুল ইসলাম মাইকে বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে যান৷’ এর কিছুক্ষণ পর শোভাযাত্রা বের হয়৷ শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে টিএসসি এলাকায় গিয়ে শেষ হয়৷

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক এই সংগঠনের সাবেক নেতা হলেও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে তিনি অংশ নেননি৷ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইনসহ দেড় শতাধিক নেতা-কর্মী এ আয়োজনে অংশ নেন৷

পরিষদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র অধিকার পরিষদ ছাত্ররাজনীতিতে নতুন একটি ধারা নিয়ে এসেছে৷ পরিষদ দলীয় দাসত্ব ও লেজুড়বৃত্তির বাইরে একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগঠন৷ আমরা শিক্ষার্থীদের পাশে আছি ও থাকব৷

সমাধান হয়ে গেছে

ছাত্র অধিকার পরিষদের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন বেলা ১১টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুই ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয়। বিশৃঙ্খলার মূল কারণ মুহাম্মদ রাশেদ খানের ওপর হামলার ঘটনাটি৷ তবে এটির ‘সমাধান হয়ে গেছে’ দাবি করে পরিষদের একাধিক শীর্ষ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, হামলাকারী রবিউল ইসলামকে যুব অধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ এরপরই রাশেদ খান প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনে যোগ দিয়েছেন৷

হামলার ঘটনায় গতকাল বুধবার গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন মুহাম্মদ রাশেদ খান৷ এ বিষয়ে কথা বলতে আজ দুপুরে রেজা কিবরিয়ার মুঠোফোনে কল করা হলে তাঁর সহকারী ফোন ধরেন৷ তিনি বলেন, রেজা কিবরিয়া বাসার বাইরে গেছেন৷ এ সম্পর্কে তাঁর (সহকারী) কিছু জানা নেই৷

রবিউলকে বহিষ্কারের বিষয়টির সত্যতা আছে কি না, জানতে চাইলে গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি৷ তিনি বলেন, রাশেদের অভিযোগের বিষয়টি তাঁর জানা নেই৷