হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপহাসকারীদেরও বিচার হওয়া উচিত: তথ্যমন্ত্রী

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ (ফাইল ছবি)

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপহাসকারীদের বিচার হওয়া উচিত বলে মনে করেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কাকরাইলে আইডিইবি মিলনায়তনে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (আইডিইবি) আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও প্রযুক্তিভাবনা: চলমান ও আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মত দেন তথ্যমন্ত্রী।

গতকাল বুধবার বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী আজ বলেন, ২০০৪ সালে এই হত্যাকাণ্ডকে যেভাবে উপহাস করা হয়েছিল, গতকাল রিজভী সাহেব সংবাদ সম্মেলনে একইভাবে এ হত্যাকাণ্ডকে উপহাস করে বিএনপির ন্যক্কারজনক ভূমিকারই পুনরাবৃত্তি করেছেন। রিজভী বলেছেন, এটি আওয়ামী লীগের সাজানো ঘটনা, তারা আত্মহত্যা করতে সেখানে গিয়েছিল। এ ধরনের কথা যারা বলে, তাদের বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ভবিষ্যতে ঘটানোর জন্য এমন উসকানি দেওয়া হয়। যারা এ ধরনের কথা বলে উপহাস করে, উসকানি দেয়, রিজভী আহমেদসহ তাদেরও বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, খালেদা জিয়াকেও বিচারের আওতায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গ্রেনেড ব্যবহারের রহস্যসহ আরও বহু সত্য বেরিয়ে আসবে।’

হাছান মাহমুদ বলেন, সত্য প্রকাশের স্বার্থে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সত্য জানার স্বার্থে ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের নৃশংস ঘটনা যাতে না ঘটে, রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেউ যেন এ ধরনের মদদ বা উসকানি না দেয়, সহায়তা না করে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন। তারেক জিয়ার সর্বোচ্চ শাস্তির পাশাপাশি খালেদা জিয়াকেও বিচারের আওতায় আনা প্রয়োজন।

ইতিহাসের কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যারা স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাংলাদেশের অভ্যুদয় চায়নি, সেই পরাজিত শক্তি রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল। আজকের জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক অপশক্তিও দেশের বিস্ময়কর সমৃদ্ধির কান্ডারি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে না পেরে তাঁকে বারবার হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, গতকাল ছিল সেই নৃশংসতার ১৫তম বছর, যে একুশে আগস্টে বৃষ্টির মতো গ্রেনেড ছুড়ে ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে দিবালোকে একটি রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর সমাবেশে হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা হয়েছিল। তখন এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপহাস করা হয়েছে। আর আজ দিবালোকের মতো সব প্রমাণিত হয়েছে, স্পষ্ট হয়েছে সে হত্যাকাণ্ডের পেছনে তৎকালীন সরকারের ইন্ধন।

মন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনকে গতানুগতিক আলোচনা না করে শোক দিবস উপলক্ষে সেমিনারের আয়োজন করায় ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন দূরদর্শী মহানায়ক হিসেবে স্বাধীনতার পরিকল্পনা করেছিলেন বহু আগে। তিনি কখনো পূর্ব পাকিস্তান বলতেন না, তাঁর বক্তৃতা যদি পড়েন এবং শোনেন, তাহলে দেখতে পাবেন সেখানে তিনি সব সময় বলতেন পূর্ব বাংলা। তিনি দীর্ঘ প্রস্তুতিতে জাতির মনন তৈরি করে এমন সময় স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন, যখন জাতি চূড়ান্ত লড়াইয়ে প্রস্তুত।

‘প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই এমন দূরদর্শী কাজ করে গেছেন, যেগুলো রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করেছে’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সাড়ে তিন হাজার স্কুল জাতীয়করণ করেছেন। এরও আগে তাঁর উদ্যোগেই প্রতিটি জেলায় বিসিক শিল্পনগর গড়ে তোলা হয়। বিদেশি কোম্পানির হাত থেকে তেলক্ষেত্রগুলো তিনি কিনে নিয়েছেন, যেগুলো রাষ্ট্রের মালিকানায় না আনলে আজকে দেশের তেল-গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মালিক থাকত বিদেশিরা। শুধু তা–ই নয়, বঙ্গবন্ধু আনক্লজ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক যে আদালত সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি করে, সেটির সদস্য করেছিলেন বাংলাদেশকে। যদি বাংলাদেশ তা না হতো, তাহলে শেখ হাসিনার পক্ষে এখানে মামলা করে ভারত এবং মিয়ানমারের কাছ থেকে আমরা যে প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রে আরেকটি বাংলাদেশ আমরা অর্জন করেছি, এটি আমরা পারতাম না।’

‘এই রক্তার্জিত স্বাধীনতা আর উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অক্ষুণ্ন রাখতে সব রাজনৈতিক অপশক্তি মোকাবিলায় সমগ্র জাতিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।

আইডিইবি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি এ কে এম এ হামিদের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম জাকির হোসেন ভূঞা, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদ এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোরাদ হোসেন মোল্ল্যা।

সেমিনারের বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সৈয়দ আবদুল আজিজ ও শাহ আলম মজুমদার।