হল খোলার পর ঢাবি উপাচার্য বললেন, ঈদের দিনের মতো মনে হচ্ছে
দেড় বছর পর আজ মঙ্গলবার সকাল আটটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। হলে উঠতে শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁদের দেখে ঈদের দিনের মতো আনন্দ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।
সকাল সাড়ে ১০টায় বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শন শেষে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ‘আজ আমাদের জন্য খুবই আনন্দের দিন। ঈদের দিনের মতো মনে হচ্ছে। প্রতিটি হলে সবাই যেভাবে আন্তরিকতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিচ্ছেন, সেটি অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’
ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘কীভাবে শৃঙ্খলিত হতে হয়, নেতৃত্বের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়, আমাদের শিক্ষার্থীরা সেই দৃষ্টান্ত তৈরি করলেন। তাঁরা ক্যাম্পাসে ফিরে আসায় শিক্ষক ও প্রশাসনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের স্থবিরতার অবসান ঘটল।’
যত দ্রুত সম্ভব সব শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে ফেরানোর লক্ষ্য জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজকের শৃঙ্খলা অব্যাহত থাকলে আগামীতে অন্য সিদ্ধান্ত নিতে আমরা অনুপ্রেরণা পাব।’
সশরীর শিক্ষা কার্যক্রম কবে নাগাদ শুরু হবে জানতে চাওয়া হলে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনার মধ্য দিয়ে সবকিছু পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হয়তো দু-এক দিনের মধ্যে সবাইকে নিয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ফেরার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর সহাবস্থান হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব মতের সহাবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যিক মর্যাদা। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
করোনাকালের শিক্ষার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদক্ষেপ প্রসঙ্গে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা একাডেমিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার পরিকল্পনা করেছি, যা ইতিমধ্যে কার্যকরও হয়েছে। আশা করছি, এক বছরের মধ্যেই আমরা ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) না থাকায় কিছু শিক্ষার্থীর টিকা নিতে না পারার বিষয়ে তিনি জানান, ৭ অক্টোবর টিএসসিতে একটি বুথ স্থাপন করা হবে। সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী তাঁদের এনআইডি করিয়ে নিতে পারবেন।
ক্যাম্পাস খুললে আন্দোলনের ভয় আছে, নানা মহল থেকে ওঠা এ ধরনের মন্তব্য প্রসঙ্গে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার। গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করে আন্দোলন-সংগ্রামের জন্ম ও চর্চা প্রত্যাশিত। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নিজেদের শুধু পাঠ্যপুস্তকনির্ভর পড়াশোনায় সীমাবদ্ধ রাখেন না। নানাবিধ আনুষঙ্গিক বিষয় তাঁদের মধ্যে সংশ্লেষণের উদ্যোগ আমরা নিই। আমাদের স্নাতকেরা যে দেশ-বিদেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন, তার পেছনে মূল কারণ হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ দেয়।’
‘গণরুম প্রধানমন্ত্রীরও পছন্দ নয়’
হলগুলোতে গণরুম বন্ধ রাখা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘গণরুম দীর্ঘদিন ধরে একটা বড় সমস্যা। আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখনো ছিল। শিক্ষার্থীদের মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠা ও সুন্দর পরিবেশের জন্য এটা একটা প্রতিবন্ধকতা। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।’
সব শিক্ষার্থী ও সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলোর সহযোগিতা থাকলে একসময় এই সংকটের সমাধান হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গণরুম থাক—এটা কোনোভাবেই আমরা চাই না। এর ভালো ও সম্মানজনক সমাধানের জন্য সবার সহযোগিতা ও দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘গণরুমের বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পছন্দ করছেন না৷ শিক্ষার্থীদের জীবনমানে ঘাটতি পড়ুক, একটা প্রতিকূল পরিবেশ থাকুক, এটা তিনি কোনোভাবেই চান না৷ তিনি আমাকে বেশ কয়েকবার পরামর্শ দিয়েছেন গণরুমের বিষয়টির সুরাহা করতে। এখন সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা দরকার।’