হলে হলে চালু ‘গেস্টরুমও’

শুরু থেকেই একদিকে অছাত্ররা হলে উঠেছেন, অন্যদিকে গণরুম-গেস্টরুমও চলছে আগের মতোই।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

করোনা পরিস্থিতির কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাস খোলার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হল থেকে অছাত্র বিতাড়ন ও হলগুলোতে থাকা গণরুমের ব্যবস্থা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু দুটি ঘোষণাই ছিল ‘ফাঁকা আওয়াজ’। শুরু থেকেই একদিকে অছাত্ররা হলে উঠেছেন, অন্যদিকে গণরুম-গেস্টরুমও চলছে আগের মতোই। এসব নিয়ে গত কয়েক দিনে কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকাই দেখা যায়নি।

আবাসনসংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন এই কক্ষগুলো নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এসব কক্ষে ওঠা নবীন শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিতে হয়, পোহাতে হয় ‘গেস্টরুম’-এর বিভীষিকাও। হলগুলোর অতিথিকক্ষে ‘আদবকায়দা’ শেখানোর নামে মানসিক নিপীড়নকে (কখনো কখনো শারীরিকও) বলা হয় ‘গেস্টরুম করানো’।

১০ অক্টোবর সব বর্ষের শিক্ষার্থীর জন্য আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের হলগুলোতে শুরু হয়েছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতা-কর্মীদের কক্ষ দখলের প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি মধুর ক্যানটিনে ছাত্রলীগের নিয়মিত ‘হাজিরা’ কর্মসূচি আবার চালু হওয়ায় শুরু হয়েছে গেস্টরুমও। এখন নিয়মিতই সন্ধ্যার পর হলগুলোর অতিথিকক্ষে বসছে ছাত্রলীগের ‘আদালত’। সেখানে জ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থীদের সালাম না দেওয়া ও ছাত্রলীগের ‘নিয়মকানুন’ না মানার অভিযোগে ‘বিচারের’ মুখোমুখি হতে হচ্ছে কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের।

নানা ঠুনকো অভিযোগ তুলে এক সপ্তাহ ধরে মারধর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের প্রথম বর্ষের কিছু শিক্ষার্থীর। তাঁদের কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, তাঁরা হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল সোবাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকা ২২৮ নম্বর কক্ষে (গণরুম) থাকেন। প্রায় প্রতিদিনই তাঁদের কাউকে না কাউকে হলের দুটি কক্ষে (২২৫ ও ১১৯ নম্বর) ডেকে নিয়ে মানসিক নিপীড়ন করছেন দ্বিতীয় বর্ষের সাত শিক্ষার্থী। কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের অন্তত তিনজনকে চড়-থাপ্পড়ও দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের এই পক্ষের নেতা সোবাইল দাবি করেন, কাউকে মারধর করা হয়নি। ‘সামান্য উচ্চ বাক্যে’ বকা বা ধমক দেওয়া হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বিত প্রয়াস দরকার। আমরা ছাত্রসংগঠনগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাই।
এ কে এম গোলাম রব্বানী, প্রক্টর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও বিজয় একাত্তর হলেরও গণরুমে থাকা প্রথম বর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থী গেস্টরুমে দুর্ব্যবহার ও মারধরের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। তবে ছাত্রীদের হলগুলোতে এমন অভিযোগ কম। কারণ, ওই হলগুলোতে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কম।

এর আগে ৬ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের একটি কক্ষ দখল করা নিয়ে হল শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। রড ও লাঠি নিয়ে তাঁদের মহড়ায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও আতঙ্ক ছড়ানো নেতাদের বেশির ভাগেরই নেই ছাত্রত্বও। কিন্তু এ ঘটনা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় বা হল কর্তৃপক্ষের কোনো ভূমিকা দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সমন্বিত প্রয়াস দরকার। আমরা ছাত্রসংগঠনগুলোসহ সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাই। শিক্ষার্থীদের সবার প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, তারা যেন একে অপরের সঙ্গে দায়িত্বশীল ও মানবিক আচরণ করে। কোথাও সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে হল কর্তৃপক্ষ তা দেখবে।’