হাসপাতাল ছেড়ে সিআরপিতে ওয়াহিদা খানম

প্রায় এক মাস চিকিৎসার পর নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতাল ছাড়ছেন ওয়াহিদা খানম। ঢাকা, ১ অক্টোবর
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম রাজধানীর নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতাল ছেড়েছেন। পরবর্তী চিকিৎসার জন্য তাঁকে মিরপুরে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, ওয়াহিদা খানম খুব দ্রুত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন।

আজ বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটাল থেকে ছাড়পত্র পান ওয়াহিদা খানম। দুপুর সাড়ে ১২টায় তিনি হেঁটে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন। গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে দুর্বৃত্তরা ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা ও তাঁর বাবার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলার পরদিন ওয়াহিদাকে নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে এনে অস্ত্রোপচার করা হয়।

এখন সিআরপিতে চিকিৎসা নেবেন ওয়াহিদা খানম
ছবি: প্রথম আলো

নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের হাই-ডিপেনডেন্সি ইউনিটের (এইচডিইউ) নিউরো ট্রমা সার্জারি বিভাগের প্রধান মো. জাহেদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এক মাস আগে যখন ওয়াহিদা এ হাসপাতালে আসেন তখন তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন ছিল। অস্ত্রোপচারের মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না। তখন তাঁর চেতনার মাত্রা ঠিক ছিল না। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁকে অপারেশনের উপযোগী অবস্থায় আনা হয়। শরীরের ডান পাশ একদম নাড়াতে পারছিলেন না। এক সপ্তাহ পর থেকে তিনি আস্তে আস্তে শরীরের ডান পাশ নাড়াতে শুরু করেন। এরপর গত তিন সপ্তাহে তাঁর আরও উন্নতি হয়। এখন তিনি হাঁটতেও পারছেন।

ওয়াহিদা খানমের বর্তমান শারীরিক পরিস্থিতি ভালো বলে জানান জাহেদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘তাঁর ডান পাশে শক্তি ফিরে এসেছে। তবে শতভাগ ফিরে আসেনি। সামান্য কিছু বাকি আছে। তাই আমরা তাঁকে মিরপুরের সিআরপিতে স্থানান্তর করেছি। সেখানে ফিজিওথেরাপি দেওয়া হবে। আশা করি বাকি শক্তিটুকুও ফিরে আসবে।’

জাহেদ হোসেন বলেন, ‘তাঁর মাথার খুলি ভেঙে মস্তিষ্কে ঢুকে যায়। সেখানে আমরা অস্ত্রোপচার করি। ক্ষতস্থান এখন সেরে গেছে। তিনি স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে ঢুকেছেন। হেঁটে তিনি এবার অ্যাম্বুলেন্সে উঠেছেন। এটা একটা বড় অর্জন।’

চিকিৎসকেরা আশা করছেন, দু-এক সপ্তাহের মধ্যে ওয়াহিদা খানম পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। তিনি এক মাসের মধ্যেই কর্মস্থলে যোগ দিতে পারবেন বলে।

দুর্বৃত্তদের হামলায় ওয়াহিদা খানমের বাবা ওমর আলী শেখও (৭০) আহত হন। তাঁকেও নিউরো সায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর বাবারও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে হাঁটার মতো অবস্থা হয়নি। তাঁর বাবাকেও সিআরপিতে পাঠানো হয়েছে।

নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক বদরুল আলম বলেন, এক মাসের মধ্যেই রোগী হেঁটে চলে যেতে পারছেন। সবার প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, ‘যে অবস্থায় তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছিল, সে অবস্থা থেকে উত্তরণ যে এত তাড়াতাড়ি হবে সেটা আমরা অস্ত্রোপচারের পরেই বুঝেছিলাম। এ ধরনের অস্ত্রোপচার এখানে হয়।’

এ হাসপাতালের প্রতি সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সবার আস্থা ছিল বলে ওয়াহিদা খানমের চিকিৎসা এখানে হয়েছে বলে জানান বদরুল আলম। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতি আস্থা রাখুন। বাংলাদেশে এখন অনেক জটিল রোগের অস্ত্রোপচার হয়, চিকিৎসা হয়। আশা করা যায়, ভবিষ্যতে মানুষকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে হবে না।’