হৃষিকেশ দাস রোডে চলছে বছরব্যাপী খোঁড়াখুঁড়ি

মাস ছয়েক আগে নালার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। গতকাল পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে হৃষিকেশ দাস রোডে।  প্রথম আলো
মাস ছয়েক আগে নালার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। গতকাল পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে হৃষিকেশ দাস রোডে। প্রথম আলো

পয়োনালা নির্মাণের জন্য এক বছর আগে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের হৃষিকেশ দাস রোডে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছিল। মাস ছয়েক আগে নালার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কটি সংস্কার করা হয়নি। কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু ঠিকাদারের কাজের গতি বাড়ছে না। এখনো ঢিমেতালেই কাজ চলছে।

সূত্রাপুরে যাতায়াতের অন্যতম প্রধান পথ এটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সড়কটি খোঁড়ার পর থেকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আশপাশের সড়ক ও গলিতে প্রতিদিন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টি হলেই কাদাপানিতে সয়লাব হয়ে যায়। আবহাওয়া শুষ্ক হলে ওড়ে ধুলা–বালু। এক দিন করে কাজ সাত দিন বন্ধ থাকে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের এমন গাফিলতির কথা স্বীকার করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগ। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডি এ জামিল (জেবি) বলছে, আগামী জুন মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের মেয়াদ রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এই রোডের সংস্কারকাজ শেষ করা হবে।

গতকাল রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, সূত্রাপুর থানার সামনে থেকে ধোলাইখাল পর্যন্ত হৃষিকেশ দাস রোডের দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার। পুরোটি সড়কটিই খানাখন্দে ভরা। ধোলাইখাল ও সূত্রাপুর থানা অংশে পৃথক দুটি স্থানে বেড়া দেওয়া। এতে সড়কটিতে

যান চলাচল বন্ধ। এর মধ্যে ধোলাইখাল অংশ সড়কের দুই পাশে বৃষ্টির পানি অপসারণে নালা নির্মাণ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। বাকি রাস্তার আর কোথাও সংস্কারকাজ করতে দেখা যায়নি। পুরো সড়কে ভাঙা কংক্রিট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এ অবস্থায়  আরএম দাস রোড থেকে পাশের একটি গলি দিয়ে রিকশাসহ অন্যান্য যান চলাচল করছে। এতে গলিসহ আশপাশের সড়কগুলোতে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

হৃষিকেশ দাস রোডের বাসিন্দা গোপাল চন্দ্র দে ও আমিনুল ইসলাম বলেন, খোঁড়াখুঁড়ির আগে সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে খানাখন্দে ভরা ছিল। তখন থেকেই এই পথে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। পরে গত বছরের জুনের দিকে এখানে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। মহল্লার মানুষ গাড়ি তো ব্যবহার করতেই পারেন না, এমনকি রিকশায় করেও বাসা থেকে যাতায়াত করা যায় না। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ ও রোগীদের দুর্ভোগ হচ্ছে বেশি। বিষয়টি মহল্লার লোকজন একাধিকবার ডিএসসিসিকে জানিয়েছেন, কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি।

ডিএসসিসির প্রকৌশল দপ্তর সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চে হৃষিকেশ দাস রোডসহ আশপাশের আরও কয়েকটি সড়ক এবং গলিতে পয়োনালা নির্মাণ এবং সংস্কারকাজের দরপত্র চূড়ান্ত করা হয়। এর মধ্যে সূত্রাপুর থানা থেকে ধোলাইখাল পর্যন্ত হৃষিকেশ দাস রোডে পয়োনালা নির্মাণ ও রোডটি সংস্কারের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিএ জামিল (জেবি)। শুরুতে তারা সূত্রাপুর থানা এলাকা থেকে কাজ শুরু করে। পরে ক্রমান্বয়ে তা ধোলাইখাল পর্যন্ত যায়। কিন্তু কাজের গতি অনেক কম। কাজটি দ্রুত শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা তাদের মতো করেই কাজ করছে।

ঢিমেতালে কাজ চলার অভিযোগ অস্বীকার করেন ডিএ জামিলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মো. সবুজ। তিনি বলেন, সূত্রাপুরের এই রাস্তাটি অনেক উঁচু-নিচু এবং অনেকগুলো বাঁক রয়েছে। ফলে পয়োনিষ্কাশন নালা নির্মাণকাজ শুরু করতেই অনেক বেশি সময় লেগেছে। পরে কাজ করতে গিয়েও অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তবে নালা নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন সড়কটি পিচঢালাইয়ের উপযোগী করা হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে ঢালাই শেষ করা হবে।

সূত্রাপুর এলাকাটি ডিএসসিসির অঞ্চল-৫–এর আওতাধীন। এ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মিথুন চন্দ্র শীল প্রথম আলোকে বলেন, সূত্রাপুরের  হৃষিকেশ দাস রোডটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তারা দ্রুত কাজটি শেষ করবে  বলে জানিয়েছে।