১৫ হাজার মানুষের রাস্তা একটি, চরম দুর্ভোগ

নিয়ন্ত্রিত এমন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে ঢাকার মিরপুরের উত্তর কালশীর প-ব্লক, ইদ্রিসের টেক, বুড়ির টেক, আলীনগর ও ঘটিপাড়া এলাকার বাসিন্দারা।

  • রাস্তাটি মিরপুর সিরামিক ওয়ার্কস লিমিটেড নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। রাস্তাটির দুই প্রান্তে দুটি
    ফটক আছে।

  • দুই পাশের ফটকেই যাতায়াতের সময়সূচির নির্দেশনা ঝুলিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখা, পথচারী ও যানবাহন সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে।

মিরপুর সিরামিকস ওয়ার্কস লিমিটেডের রাস্তাটি ব্যবহার করে নির্ধারিত সময়ের ভেতরে যাতায়াত করতে হয় উত্তর কালশী এলাকায় প্রায় ১৫ হাজার বাসিন্দাকে। ছবিটি সম্প্রতি তোলা।
ছবি: প্রথম আলো

হাজারো মানুষের যাতায়াতের রাস্তা কেবল একটি। ওই রাস্তা ছাড়া এলাকায় প্রবেশ বা বের হওয়ার বিকল্প কোনো পথ নেই। রাস্তাটি আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হওয়ায় যাতায়াত নিয়ন্ত্রিত হয় ঘড়ির কাঁটা ধরে।

নিয়ন্ত্রিত এমন রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে ঢাকার মিরপুরের উত্তর কালশীর প-ব্লক, ইদ্রিসের টেক, বুড়ির টেক, আলীনগর ও ঘটিপাড়ার বাসিন্দারা। এলাকাটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের অধীনে। এলাকাটিতে ১৫ হাজারের বেশি মানুষের বসবাস। তাঁদের বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের।

রাস্তাটি মিরপুর সিরামিক ওয়ার্কস লিমিটেড নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। রাস্তাটির দুই প্রান্তে দুটি ফটক আছে। একটি মিরপুর সিরামিক সড়ক অংশে, অন্যটি উত্তর কালশী অংশে। দুই পাশের ফটকেই যাতায়াতের সময়সূচির নির্দেশনা ঝুলিয়ে রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তাতে লেখা, পথচারী ও যানবাহন সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করতে পারবে।

ওই এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সিরামিক কোম্পানির রাস্তাটি তাঁদের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তা। এলাকায় ঢোকার ও বের হওয়ার অন্য কোনো পথ নেই।

এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, রাস্তাটি দিয়ে পণ্য পরিবহনের জন্য কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়। বাসাবাড়ি বদল, আসবাব কিংবা অন্য কোনো মালামাল পরিবহনের জন্য কারখানার নিরাপত্তা শাখা থেকে গেট পাস নিতে হয়। পাস বা অনুমতি নেওয়া না হলে প্রবেশপথে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা গেট দিয়ে ঢুকতে বা বের হতে দেন না।

প-ব্লকের বাসিন্দা ইকরামুল খান বলেন, রাতে জরুরি পরিস্থিতিতে কোনো রোগীকে হাসপাতালে নিতে সমস্যা হয়। প্রবেশপথে দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তাকর্মীরা যেতে দিলেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন, তাতে দেরি হয়ে যায়।

গত শনিবার কারখানার ২ নম্বর ফটকে দায়িত্ব পালন করছিলেন নিরাপত্তাকর্মী সালাম মিয়া। তিনি নিজেও উত্তর কালশীতে থাকেন। তিনি জানান, সময় নির্ধারিত থাকলেও সাধারণ মানুষের যাতায়াতে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হয়। তবে যেসব ব্যবসায়ী নিয়মিত পণ্য পরিবহন করেন, তাঁদের সাধারণত অনুমতি নিতে হয় না।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তাটি ভাঙাচোরা। জায়গায় জায়গায় বড় গর্ত। গর্তে জমে আছে পানি। রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলছে সাবধানে। চলন্ত রিকশা থেকে ছিটকে পড়ার ভয়ে দুই হাতে শক্ত করে রিকশা ধরে রেখেছেন অনেকে।

আলী নগরের বাসিন্দা সোলায়মান হোসেন বলেন, কখনো কখনো গর্ত খুব বেশি বড় হয়ে গেলে কারখানার ভারী যান চলতে সমস্যা হলে রাস্তায় কিছু ইট-সুরকি ফেলে মেরামত করা হয়। ভাঙা রাস্তায় বয়স্ক ও শিশুদের চলতে অনেক সমস্যা হয়।

মিরপুর সিরামিক ওয়ার্কসের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক ওয়ালিদ খান বলেন, জনসাধারণের যাতায়াতে কোনো বাধা দেওয়া হয় না। জরুরি যেকোনো প্রয়োজনে যেকোনো সময় যাতায়াত করা যায়। শুধু পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে আগে থেকে অনুমতি (গেট পাস) নিতে হয়।

জানতে চাইলে ডিএনসিসি ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাজ্জাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই এলাকার মানুষের সমস্যার বিষয়ে তিনি জানেন। আপাতত কিছুই করার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, উত্তর কালশীর দক্ষিণ অংশে কিছু আবাসন প্রকল্পের কাজ চলছে। যেগুলো ওই এলাকার লাগোয়া। বছরখানেকের মধ্যে আবাসন প্রকল্পের রাস্তা চালু হয়ে গেলে ওই রাস্তা উত্তর কালশীর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে। তখন সমস্যা থাকবে না।