৪০ কেজির বস্তা নিয়ে গাবতলীতে দাঁড়িয়ে ব্যবসায়ী ইমন

হেঁটে অথবা ছোট যানে ঢাকায় ঢুকছেন অনেকে।
ছবি: সাজিদ হোসেন

রাজধানীর গাবতলী দিয়ে বাস ঢোকা ও বের হওয়া তৃতীয় দিনের মতো বন্ধ। তবে কর্মস্থল, ব্যবসা ও চিকিৎসার প্রয়োজনে ঢাকায় ঢুকছেন অনেকে। কিছু দূর হেঁটে, কিছু দূর ছোট বাহনে করে তাঁরা ঢাকায় ঢুকছেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে যাঁরা ঢাকা থেকে বের হচ্ছেন, তাঁরাও পড়ছেন ভোগান্তিতে।

ব্যবসার কাজে সাভার যাবেন ইমন ইসলাম। বেলা ১১টার দিকে তিনি গাবতলীতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সঙ্গে ছিল ৪০ কেজি ওজনের কাপড়ের বস্তা। তিনি হাজারীবাগের নিজের কারখানা থেকে অটোরিকশায় করে গাবতলী এসেছেন। বললেন, ‘এখন কীভাবে বস্তা নিয়ে যাব, বুঝতে পারছি না। আধা ঘণ্টা ধরে রোদে দাঁড়িয়ে আছি। রোদের জন্য রাস্তায় দাঁড়ানো যাচ্ছে না।’

গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় দেখা যায়, এখান থেকে দূরপাল্লার যান চলাচল বন্ধ আছে। টার্মিনাল ফাঁকা, টিকিট কাউন্টারগুলোও বন্ধ রয়েছে। ঢাকার বাইরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে আসা বাসগুলো গাবতলী পশুর হাটের সামনে থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
আমিনবাজার সেতুর ওই পারে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিভিন্ন ছোট আকারের বাহনের তীব্র যানজট। আমিনবাজার বাসস্ট্যান্ডের কিছু দূর আগেই বাস ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে ঢাকামুখীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। কেউ কেউ দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার হেঁটে ঢাকায় ঢুকছেন। কেউ কর্মস্থলে, কেউবা ব্যবসার কাজে, চিকিৎসক দেখানোর জন্য ঢাকায় ঢুকেছেন।

বিভিন্ন প্রয়োজনে ঢাকা থেকে বের হতে ও ঢুকতে উভয় পথেই মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
ছবি: সাজিদ হোসেন

ঢাকা থেকে বের হতে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী ট্রাক, মোটরসাইকেল, পিকআপ, রিকশাসহ ছোট বাহনগুলোকে যেতে দেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো বাসই যেতে দেওয়া হচ্ছে না। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকেই আন্তনগরের বাস ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে ঢাকা থেকে বের হতে ও ঢুকতে উভয় পথেই মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

রাজধানী সারা দেশ থেকে রাজধানী তিন দিন ধরে বিচ্ছিন্ন। ঢাকার আশপাশের চারটি জেলাসহ মোট সাতটি জেলায় জরুরি সেবা ছাড়া সব ধরনের চলাচল ও কার্যক্রম বন্ধ আছে গত মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে। এমন বিধিনিষেধ চলবে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত।

ঢাকায় প্রবেশের পথে রেজাউল করিমকেও একই ভোগান্তিতে পড়তে দেখা যায়। তিনি তাঁর সাত বছরের কন্যাশিশুকে নিয়ে হাঁটছিলেন আমিনবাজার সেতুতে। মেয়েকে চিকিৎসক দেখাতে তিনি যাবেন ফার্মগেটে। তিনি বলেন, ‘মেয়ের টনসিলের ব্যথাটা বেড়েছে কদিন ধরে। এখন বাচ্চাকে নিয়ে ২০ মিনিট ধরে হাঁটছি।’

সরকারঘোষিত বিধিনিষেধের আওতায় সাত জেলার মধ্যে মানিকগঞ্জ আছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, এ জেলায় মানুষের চলাচল ও সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকার কথা। অথচ অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে এসব জেলা থেকে ঢাকায় ঢুকছেন এবং বের হচ্ছেন। তেমনই একজন আলিয়া খাতুন। সঙ্গে আছে তাঁর মেয়ে। তাঁরা দুজন সকালে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাঁরা আমিনবাজার ব্রিজে হাঁটছিলেন। যাবেন মিরপুর-১২–তে বোনের বাসায়। তিনি জানান, বোন জ্বরে অসুস্থ বলে তাঁকে দেখতে যাচ্ছেন। তাঁকে নিয়েই আজ বিকেলে আবার মানিকগঞ্জে ফিরবেন।
কীভাবে এত পথ বাস ছাড়া এলেন, তা জানতে চাইলে আলিয়া খাতুন বলেন, সিঙ্গাইর থেকে অটোতে করে ধল্লা ব্রিজ পর্যন্ত এসেছেন। সেখান থেকে আবার হেমায়েতপুর অটোতে। হেমায়েতপুর থেকে বাসে আমিনবাজার। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় পুলিশের কয়েকটি চেকপোস্ট ছিল। তবে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসতে পুলিশের বাধা পাইনি। রাস্তায় বাস ছাড়া সবই চলছে।’

গাবতলী চেকপোস্ট থেকে পুলিশের সদস্যরা সব বাসকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। গাবতলী চেকপোস্টের দায়িত্বে আছেন পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) পরিমল চন্দ্র পাল। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশেষ করে ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, পণ্যবাহী গাড়ি অগ্রাধিকার দিচ্ছি। ঢাকায় রোগী দেখানো, ব্যাংকের কাজসহ, বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে মানুষ ঢাকায় আসছেন।’