'কিছুটা' কঠোর ট্রাফিক পুলিশ

নতুন সড়ক আইনে মামলা করা হয় এক চালককের বিরুদ্ধে। গতকাল দুপুরে পল্টনে।  প্রথম আলো
নতুন সড়ক আইনে মামলা করা হয় এক চালককের বিরুদ্ধে। গতকাল দুপুরে পল্টনে। প্রথম আলো

প্রতিদিন সকালে প্রাইভেট কারে বনানী অফিসে যান হাফিজুর রহমান। গত ১৪ নভেম্বর সকালে তাঁর গাড়িচালক রাস্তায় নেমে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটান। তখনই ওই এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট ৮০০ টাকা জরিমানা করে মামলা দেন। হাফিজুর রহমান সঙ্গে সঙ্গে ইউ-ক্যাশ কাউন্টারে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে রসিদ জমা দিলে গাড়ির কাগজপত্র ফিরিয়ে দেন। এরপর থেকে নিয়মের ব্যত্যয় করেছেন না 

হাফিজুর রহমানের গাড়ির চালক। গতকাল মঙ্গলবার সকালে নিয়ম মেনে চলার সময় বনানী রেলক্রসিংয়ে তাঁর গাড়ির কাগজপত্র ও চালকের সনদ যাচাই
করেন একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট। এ সময় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তবে কাগজপত্র সঠিক থাকায় হাফিজুর রহমানকে আর জরিমানা
গুনতে হয়নি।

শুধু বনানী এলাকায় নয়, গতকাল রাজধানীর প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ জোরেশোরে যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জরিমানা করে মামলা দেওয়া হচ্ছে। এসব মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে নতুন সড়ক আইন, ২০১৮–এর বিভিন্ন ধারায়। ৩০ নভেম্বর থেকে এ আইনের প্রয়োগ শুরু হয়েছে বলে ট্রাফিক বিভাগের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান। তবে এখন কিছুটা শিথিল প্রয়োগ করা হচ্ছে। ধীরে ধীরে এ আইনের কঠোর প্রয়োগ হবে।

গতকাল দেখা গেছে, গাবতলী এলাকায় সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গণপরিবহনসহ বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র যাচাই করেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তারা। রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথ হিসেবে পরিচিত গাবতলীর পর্বত সিনেমা হলের সামনের সড়ক, গাবতলী আন্ডারপাসের সামনে এবং মাজার রোডে তিনটি দলে ভাগ হয়ে কাগজপত্র যাচাই করা হয়। এ সময় বাসসহ ছয়টি যানবাহনকে জরিমানাসহ মামলা করা হয়। এর মধ্যে একটি বাসের ও একটি মোটরসাইকেলের চালকের লাইসেন্স ছিল না। জানা গেছে, গত শনিবার থেকে গাবতলী ট্রাফিক জোনের এ কার্যক্রমে এ পর্যন্ত প্রায় ৩০টি মামলা হয়েছে। সব মামলাই নতুন সড়ক আইনের বিভিন্ন ধারায় করা হয়েছে।

 একই ধরনের কার্যক্রম গতকাল সকালে কয়েক ঘণ্টা চালাতে দেখা গেছে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে, বিজয় সরণি মোড়, শেরেবাংলা নগর, সোনারগাঁও চত্বর, মহাখালী এলাকায়। প্রতিটি এলাকায় ঊর্ধ্বতন ট্রাফিক কর্মকর্তার উপস্থিতিতে কাগজপত্র যাচাই ও মামলা করার সময় ভিডিও ক্যামেরার মাধ্যমে চিত্র ধারণ এবং মাইকিং করে পথচারীদের চলাচলে সচেতন করা হয়েছে।

ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আগে যে মেশিন দিয়ে মামলা ও জরিমানা আদায় করা হতো, সেগুলো আপগ্রেডের কার্যক্রম চলছে। তাই ট্রাফিক বিভাগের প্রতিটি জোনে মামলার জন্য একটি করে ছাপানো বই দেওয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় আইন প্রয়োগ চলছে, সেখানে একজন সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার একজন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতিটি মামলার সব কার্যক্রম ভিডিও করতে হবে এবং যাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁকে ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হচ্ছে।

 এ ছাড়া যান ও চালকের কাগজপত্র যাচাইয়ের সময় লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস, উল্টো পথে যান চলাচল, ফুটপাতে যান চলাচল ও বেপরোয়া চলাচলের মতো বিষয়গুলো বিবেচনা করে আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে। তবে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে নতুন সড়ক আইনের ‘কিছুটা’ কঠোর প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে বলে জানান ডিএমপির (ট্রাফিক) অতিরিক্ত কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, আইনের প্রয়োগ কোনো না কৌশলে করা হচ্ছে। নতুন সড়ক আইনেই তা করা হচ্ছে। আইন হয়েছে, প্রয়োগ তো হবেই।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শুধু যানবাহন নয়, পথচারীদের চলাচলের বিষয়েও সড়ক আইনে বিভিন্ন ধারা ও জরিমানার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এ ব্যাপারেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বাসমালিকেরা জানান, নতুন সড়ক আইনের প্রয়োগের কারণে তাঁরা চালক ও তাঁর সহকারীদের বাসের গেট নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া না খোলা, যত্রতত্র যাত্রী না ওঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এর পাশাপাশি চালকের লাইসেন্স রয়েছে কি না, তা–ও যাচাই করছেন। অন্যদিকে বাসের ফিটনেসসহ অন্যান্য কাগজ হালনাগাদ করে বাস সড়কে নামাচ্ছেন।