প্লট না নিলেও টিউলিপের সাজা যে কারণে

টিউলিপ সিদ্দিকফাইল ছবি: রয়টার্স

শেখ হাসিনার পরিবারের বিরুদ্ধে পূর্বাচলের ছয়টি প্লট নিয়ে ছয়টি মামলা হয়েছে; এর একটি প্লটও তাঁর ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিকের নামে নেই। কিন্তু তিনটি মামলায় তিনি আসামি, এর একটিতে তাঁর কারাদণ্ড হলো।

আজ সোমবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪–এর বিচারক মো. রবিউল আলমের দেওয়া রায়ে টিউলিপকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে তাঁকে। অর্থ দিতে ব্যর্থ হলে তাঁকে আরও ছয় মাস কারাভোগ করতে হবে।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট সদস্য, সাবেক মন্ত্রী টিউলিপকে সাজা দেওয়ার কারণ হলো, তিনি তাঁর মা শেখ রেহানার নামে রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দে তাঁর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েছিলেন।

টিউলিপকে ‘প্রিভেনশন অব করাপশন অ্যাক্ট ১৯৪৭’–এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, আসামি টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর খালা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব সালাহ উদ্দিনকে মোবাইল, ইন্টারনেটের বিভিন্ন অ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করে প্রভাবিত করেছেন বলে সাক্ষীদের জবানবন্দির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে পূর্বাচলে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা নিজের নামে একটি প্লট নেওয়ার পাশাপাশি তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, ভাগনি আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী, ভাগনে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের নামেও প্লট বরাদ্দ হয়। ২০২২ সালে তাঁরা প্লটগুলো গ্রহণ করেন।

জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুর্নীতি দমন কমিশন এই প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধানে নামে। তারপর গত জানুয়ারিতে ছয়টি প্লট নিয়ে ছয়টি মামলা করে। তাতে অভিযোগ করা হয়, আবেদনের সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর এই প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া তাদের নামে রাজউকের আওতাধীন এলাকায় বাড়ি থাকায় তাঁরা আইনত নতুন করে প্লট বা ফ্ল্যাট পেতে পারেন না।

আরও পড়ুন
শেখ রেহানার প্লট দুর্নীতির মামলার রায়কে কেন্দ্র করে আজ সোমবার ঢাকার আদালতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছিল
ছবি: প্রথম আলো

ছয়টি মামলার সব কটিতে আসামি করা হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, তিনি এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রধানমন্ত্রী পদের প্রভাব খাটিয়েছেন। শেখ রেহানা, রাদওয়ান ও আজমিনার বিরুদ্ধে করা আলাদা তিনটি মামলায় আসামি করা হয় টিউলিপকে।

গত জানুয়ারিতে করা এই মামলাগুলোর মধ্যে শেখ রেহানার প্লটের মামলার এজাহারে বলা হয়, ‘টিউলিপ জানতে পারেন, তাঁর খালা শেখ হাসিনা নিজের নামে এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের নামে পূর্বাচলের নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট নিচ্ছেন। এটি জানার পর তিনি ব্রিটিশ এমপি হিসেবে বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে তাঁর মা শেখ রেহানা, বোন আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী ও ভাই রাদওয়ান মুজিবের নামে ওই প্রকল্পে প্লট বরাদ্দের জন্য শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন।’

শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ ও সায়মা ওয়াজেদের মামলায় এরই মধ্যে রায় হয়েছে। তাতে তাঁদের সাজাও দেওয়া হয়। আজ শেখ রেহানার প্লটের মামলারও রায় হলো। রাদওয়ান ও আজমিনার প্লটের মামলার রায় এখনো বাকি রয়েছে। টিউলিপ ও শেখ হাসিনা ওই দুটি মামলারও আসামি।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের কোনো আদালতে যুক্তরাজ্য তথা বিদেশি কোনো আইনপ্রণেতার বিরুদ্ধে সাজার রায় এটাই প্রথম। এ রায় হয়েছে টিউলিপের অনুপস্থিতিতেই।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দুর্নীতির নানা অভিযোগ নিয়ে যুক্তরাজ্যেও চাপের মধ্যে আছেন লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ। তাঁর বিরুদ্ধে লন্ডনে বাড়িসংক্রান্ত দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, যার সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

গত বছর বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের আগে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার সরকার গঠনের পর তাঁর মন্ত্রিসভায় সিটি মিনিস্টার করেছিলেন টিউলিপকে। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপকে পদত্যাগ করতে হয়।

আরও পড়ুন

৪৩ বছর বয়সী টিউলিপ অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। বাংলাদেশে দুদকের এ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি টিউলিপ সপরিবার লন্ডনে বসবাস করছেন। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ নাগরিক ২০১৫ সালে প্রথম এমপি হন। তারপর এ নিয়ে চতুর্থবার হাউস অব কমনসে প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি।

আরও পড়ুন