বিদ্যালয় ভবন নির্মাণকাজে পরতে পরতে গলদ

১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশে তিন হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণকাজের মান নিয়ে প্রশ্ন।

প্রকল্পের মেয়াদ শেষ করার কথা ছিল তিন বছরের মধ্যে। অগ্রগতি কম দেখে পরে মেয়াদ আরও আড়াই বছর বাড়ানো হয়। এরপরও শতাধিক ভবনের নির্মাণকাজই শুরু হয়নি। আবার ছয় মাস থেকে এক বছর আগে অনেক ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও আসবাব দেওয়া হয়নি।

রয়েছে টয়লেটের দরজা ও কমোডের ফ্ল্যাশে ত্রুটি। কিছু ভবনের বেসিন ব্যবহারের অনুপযোগী। ভবন নির্মাণে রয়েছে নানা ত্রুটি। নির্মাণের সময়ই হেলে পড়েছে ভবন—এমন ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে মেয়াদ বাড়লেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কারণ, প্রকল্পের মেয়াদ আছে আর মাত্র আট মাস।

১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সারা দেশে ৩ হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উন্নয়নকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। প্রথমে ২০২০ সালের ডিসেম্বর এবং পরে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই নানা গলদ। বিপুল ব্যয়ের এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খোদ সরকারি প্রতিষ্ঠানের জরিপেই উঠে এসেছে বিষয়টি। উপকারভোগীদের প্রায় ২৮ শতাংশ মনে করেন, প্রকল্পের কাজের গুণগত মান ভালো নয়।

আইএমইডি ১০টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করার লক্ষ্যে সময়ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, শ্রেণিকক্ষ কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য বিদ্যালয় নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই আসবাব সরবরাহ ইত্যাদি।

সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডির) এক নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনে বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভবনসহ শিক্ষার আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের এই প্রকল্পে নানা সমস্যার চিত্র উঠে এসেছে। সারা দেশে প্রায় প্রায় ২১ হাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এতে পড়াশোনা করেন এক কোটির বেশি শিক্ষার্থী। বিপুল এই শিক্ষার্থীর শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে। এই সংকট কাটাতে বাছাই করে তিন হাজার বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন নির্মাণ করছে সরকার। সরকারের অর্থায়নে ‘নির্বাচিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সমূহের উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)।

প্রকল্পের আওতায় সমতলের শহর ও গ্রাম এলাকায় ২ হাজার ৪৫০টি বিদ্যালয়ে ৯টি শ্রেণিকক্ষসহ আরও কিছু সুবিধা–সংবলিত চারতলা শিক্ষা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। মহানগর এলাকায় ছয়তলা ১০০টি বিদ্যালয় ভবন হচ্ছে। এ ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে ৫০টি, উপকূলীয় অঞ্চলে ১৫০টি, হাওর, বিল বা নদী এলাকায় ৫০টি, দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ত এলাকায় ১৭৫টি এবং নদীভাঙন এলাকায় ২৫টি বিদ্যালয়ে ভবন হচ্ছে।

ভবন নির্মাণের ত্রুটি ও আসবাব না দেওয়ার বিষয়ে ইইডির প্রধান প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, আইএমইডি যেসব ত্রুটি–বিচ্যুতি ও পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যেসব জায়গায় দৃশ্যমান ত্রুটি আছে, সেগুলো ক্রমান্বয়ে সংশোধন করা হবে। আসবাব সরবরাহের জন্য দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৯০০ প্রতিষ্ঠানের দরপত্র হয়ে গেছে।

এর ফলে নানা জটিলতায় প্রকল্প শুরুর চার বছর পরও গত এপ্রিল পর্যন্ত ১০৩টি বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণকাজ শুরুই করা যায়নি। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ, নমুনা ছাড়াই বিদ্যালয় নির্মাণ, পাইলিং–সংক্রান্ত জটিলতা, শিক্ষার্থী অনুপাত আমলে না আনা, নকশায় দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়েছে।

গোড়ায় গলদ

আইএমইডি গত ৩০ জুন নিবিড় পরিবীক্ষণ প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করেছে। প্রতিবেদনটি তৈরির জন্য ৬৪টি বিদ্যালয়কে নমুনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ২৫ কোটি টাকার বেশি যেকোনো প্রকল্পের শুরুতেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়ে। অথচ এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি।

আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়নি। ২০১৭ সালের জুনে অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায়ও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর প্রকল্পটি গ্রহণের বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে সভায় ইইডির তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী বলেছিলেন, সম্ভাব্যতা যাচাই করা সময়সাপেক্ষ বিষয়। এটি করে প্রকল্প গ্রহণ করতে গেলে বাস্তবায়নকাজ দেরি হবে। আলোচকেরা তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছিলেন, সমীক্ষা ছাড়া এত বড় প্রকল্প গ্রহণ করলে তা নিয়মের ব্যত্যয় হবে। শেষ পর্যন্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্পটি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

এর ফলে নানা জটিলতায় প্রকল্প শুরুর চার বছর পরও গত এপ্রিল পর্যন্ত ১০৩টি বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণকাজ শুরুই করা যায়নি। এ ছাড়া জমি অধিগ্রহণ, নমুনা ছাড়াই বিদ্যালয় নির্মাণ, পাইলিং–সংক্রান্ত জটিলতা, শিক্ষার্থী অনুপাত আমলে না আনা, নকশায় দীর্ঘসূত্রতা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ভবন হয়েছে, আসেনি আসবাব

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, এখনো ২৫টি ভবনের দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে ৪৮টি বিদ্যালয়ের কার্যাদেশ দেওয়া হলেও গত এপ্রিল পর্যন্ত অগ্রগতি শূন্য। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ঠিকাদার কাজ শুরু করেননি।

মোট প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৭৫ শতাংশ। তবে আসবাব সরবরাহের অগ্রগতি মাত্র ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। ছয় মাস থেকে এক বছর আগে পুরোপুরি কাজ শেষ হয়েছে ১ হাজার ১৮৩টি (৩১ শতাংশ) ভবনের। ইতিমধ্যে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এসব ভবন বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এগুলোতে আসবাব সরবরাহ করা হয়নি। ফলে এসব ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম যথযাথভাবে চালু করা যাচ্ছে না।

পুরোপুরি কাজ শেষ হয়েছে, এমন ২০টি বিদ্যালয় পরিদর্শনের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো বিদ্যালয়েই আসবাব সরবরাহ করা হয়নি। এমনকি কখন সরবরাহ করা হবে, তা শিক্ষকেরাও জানেন না।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ফুলখাঁ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় এবং হরিশ্বর তালুক উচ্চবিদ্যালয়ে চারতলা দুটি ভবনের নির্মাণকাজ গত জানুয়ারিতে শেষ হয়েছে। তবে দুটি বিদ্যালয়ে এখনো আসবাব সরবরাহ করা হয়নি। দুটি ভবনের টয়লেটের দরজায় সমস্যা।

সরেজমিন যা দেখা গেল

আইএমইডির প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রথম আলোর কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা সম্প্রতি রাজারহাট উপজেলার ফুলখাঁ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ে যান। বিদ্যালয়ের নতুন ভবনে ভাঙা সীমিতসংখ্যক ব্রেঞ্চ ও পুরোনো চেয়ার–টেবিল দিয়ে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। নতুন আসবাব কবে আসবে, জানে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। ভবন হস্তান্তরের সাত মাসের মধ্যেই ৪৮টি ফ্যানের ৫টি নষ্ট হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি টয়লেটেও সমস্যা দেখা যায়। দ্বিতীয় তলার টয়লেটে পানি ছাড়লে ছাদ চুইয়ে নিচতলায় চলে আসে। ফলে সব ভবনের বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যার আশঙ্কায় টয়লেটটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

ভবনের ১২টি কক্ষের মধ্যে ৮টির দরজায় সমস্যা। এখনই দরজা বেঁকে গেছে, ছিটকিনি ঠিকমতো লাগানো যায় না। জানালার অবস্থাও একই। শ্রেণির হোয়াইট বোর্ড ইতিমধ্যেই বেঁকে গেছে। বৈদ্যুতিক সুইচ বোর্ডও ঠিকমতো কাজ করছে না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিম মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ভবন হস্তান্তরের সাত মাস পার হয়ে গেলেও আসবাব পাননি। জরাজীর্ণ, ভাঙা টেবিলে পাঁচজন করে শিক্ষার্থী কষ্ট করে বসে ক্লাস করছে।

একই সময়ে বরাদ্দ পাওয়া হরিশ্বর তালুক উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়েও দেখা যায় নানা সমস্যা। সেখানেও আসেনি আসবাব।

কাজ ত্রুটিবিচ্যুতিতে ভরপুর

খুলনার ডুমুরিয়া পল্লীশ্রী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্মাণের সময়েই একদিকে হেলে পড়েছিল ভবনটি। ২০টি বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণের নানা ত্রুটিবিচ্যুতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এসব ভবনের অধিকাংশেরই টয়লেটের কাঠের দরজা মানসম্মত ছিল না। এগুলোর দরজা বেঁকে যাওয়া, ছিটকিনিতে সমস্যাসহ নানা সমস্যা রয়েছে। কয়েকটি বিদ্যালয়ের হাই কমোডের ফ্ল্যাশে সমস্যা ছিল। ২০টি বিদ্যালয়ের ৭টিতেই (৩৫ শতাংশ) ভবনের বেশ কয়েকটি বেসিন ব্যবহারের অনুপযোগী। এ ছাড়া প্রতিটি বিদ্যালয়ের বেশ কটি বৈদ্যুতিক সুইচ অকেজো দেখা যায়। কিছু বিদ্যালয় ভবনের পানির কলও নষ্ট ছিল।

প্রতিবেদনে পরিদর্শনের চিত্র তুলে ধরে বলা হয়, প্রতিটি বিদ্যালয়ে ২ কিলোওয়াটের একটি ‘সোলার সিস্টেম’ রয়েছে। তবে ৬৫ ভাগ বিদ্যালয়ে এর ব্যবহারের হতাশাজনক চিত্র দেখা গেছে। এটি নিয়মিত বন্ধ ও চালু করতে হয়। কিন্তু বেশির ভাগ স্কুলে তা ঠিকমতো ব্যবহার করা হয় না। এ ছাড়া পিইসির সভায় বিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীর সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সুপারিশ করা হলেও বাস্তবায়নকারী সংস্থা নিরাপত্তার বিষয়ে বাস্তবসম্মত কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিপিপি অনুযায়ী, প্রতি তিন মাসে একবার পিইসির সভা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভা প্রতি মাসে একবার করার বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। সংশ্লিষ্ট কাজের তদারকির জন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে একটি স্থানীয় তত্ত্বাবধান কমিটি (এলএসসি) গঠন করে প্রতি মাসে অথবা প্রয়োজনে যেকোনো সময় সভা করার নিয়ম থাকলেও তা অনুসরণ করা হয়নি। দু-তিন বছরে তিন থেকে চারটি সভা হয়েছে, যা প্রকল্প বাস্তবায়ন ও গুণগত মান বজায় রেখে সময়মতো নির্মাণকাজ শেষ করার ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।

গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন

সমীক্ষা চালাতে নির্বাচিত ৬৪টি বিদ্যালয়ের ১ হাজার ২৪ জন উপকারভোগী শিক্ষার্থী–শিক্ষক, স্থানীয় মানুষের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। উত্তরদাতাদের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজের ক্ষেত্রে নেতিবাচক মতামত দিয়েছেন ২৯ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা।

আবার অসন্তোষ প্রকাশ করা উত্তরদাতাদের মধ্যে ২৮ দশমিক ৬১ শতাংশ বলছেন, প্রকল্পের কাজ খুবই ধীরগতিতে হচ্ছে। আর প্রায় ২৮ শতাংশ মনে করেন, কাজের গুণগত মান ভালো নয়। কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাব, সঠিক জায়গায় বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ না হওয়া, কাজে পরিবেশ-প্রতিবেশের ক্ষতিসাধনসহ আরও নানা সমস্যার কথা বলেন উত্তরদাতারা।

ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন

চার বছরের মধ্যে প্রকল্পে তিন পরিচালক বদল হয়েছেন। আবার পরিবর্তনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ১২ অক্টোবর সর্বশেষ প্রকল্প পরিচালক শাহ নইমুল কাদের অবসরে যান। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রকল্প পরিচালক বদল হচ্ছে। শাহ নইমুল কাদেরের আগে ছয় মাস ও পাঁচ মাসের ব্যবধানে দুজন প্রকল্প পরিচালক বদল হন। অথচ নিয়ম অনুযায়ী, ঘন ঘন প্রকল্প পরিচালক বদলের সুযোগ নেই।

নিয়ম অনুযায়ী, বিশেষ প্রয়োজনে পরিচালক পরিবর্তনের দরকার হলে পরিকল্পনামন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। কারণ, প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বদলি বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় বাধা তৈরি করে। একজন নতুন প্রকল্প পরিচালক এলে তাঁর শিখতে শিখতেই অনেকটা সময় চলে যায়। প্রকল্প পরিচালকের ঘন ঘন পরিবর্তন প্রকল্পের কাজ যথাসময়ে শেষ করাকে দুরূহ করে তোলে, যা এই প্রকল্পের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে।

১০ দফা সুপারিশ

আইএমইডি ১০টি সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাকি কাজ শেষ করার লক্ষ্যে সময়ভিত্তিক সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, শ্রেণিকক্ষ কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য বিদ্যালয় নির্মাণের সঙ্গে সঙ্গেই আসবাব সরবরাহ ইত্যাদি।

সার্বিক বিষয়ে নগর-পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর যেসব কাজ করছে, তার গুণগত মান ও নকশার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাই গভীরভাবে পর্যালোচনা করে এসব কাজ করা উচিত।

শিক্ষাবিদেরা বলছেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রমের সমস্যার সমাধানে এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। অথচ ভবন নির্মাণ করা হলেও আসবাব নেই। এতে শিক্ষা কার্যক্রমে ভবনগুলো ঠিকমতো কাজে আসছে না। শুরুতেই ভবনগুলোতে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি দেখা যাচ্ছে। অথচ বিপুল অর্থ ব্যয়ে দীর্ঘদিন ব্যবহারের জন্য এসব ভবন বানানো হচ্ছে। এখনই এমন অবস্থা হলে কয়েক বছর পর এসব ভবনের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে, যা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত করবে। তাই এখনই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নজরদারি ও যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।