ত্বকী হত্যায় জড়িত ব্যক্তিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তারা নারায়ণগঞ্জে রাজত্ব কায়েম করেছে। এই হত্যাকাণ্ডের এক দশক পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি। বিচারব্যবস্থা দুর্বল হলে দেশ স্মার্ট হবে না। তবে দেরিতে হলেও ত্বকী হত্যার বিচার হবে এবং সমাজে সুস্থতা ফিরে আসবে।

আজ শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরে অষ্টম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে আয়োজকেরা এসব কথা বলেন। সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ এ অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী বসবাস করি ওসমানীয় রাজত্বে। নারায়ণগঞ্জ নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক ইতিবাচক নারায়ণগঞ্জ ছিল। এর পাশাপাশি কিছু কালো অধ্যায়ও ছিল। সেই কালো অধ্যায়ের নেতৃত্ব দিয়েছে গুটি দুয়েক পরিবার। সবচেয়ে বেশি যারা এই অধ্যায়ের নেতৃত্বের অধিকারী, তারাই ত্বকী হত্যাকাণ্ডের নায়ক।’

নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র আরও বলেন, এমন নারায়ণগঞ্জ চাননি, যেখানে সন্তানেরা নির্ভয়ে চলতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘এখন তো শহরে আর কোনো নেতা নেই। আমাদের নারায়ণগঞ্জ হলো এক নেতার এক দেশ। অন্য কোনো নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, মানুষের অবদান নেই।’

দলের বিরুদ্ধে কথা বলেন, এমন অভিযোগে নিজের নামে অনেক বিচার গেছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র বলেন, দলের বিরুদ্ধে তিনি কথা বলেন না। দলকে ভালোবেসেই প্রতিবাদ করেন। প্রতিবাদ করতেই হবে। এমন নির্মম নিষ্ঠুরতা চালাবে, দলের দোহাই দিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হবে, তা তিনি মানতে রাজি না। এ ছাড়া বলেন, একটি পরিবারকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জে সবকিছুকে বিলীন করে দেওয়া হচ্ছে। সেই পরিবারের লোকজন নারায়ণগঞ্জে অত্যাচার চালাচ্ছে। প্রশাসন সব সময় তাদের সহযোগিতা করছে। তবে এ অবস্থা বেশি দিন চলবে না। পরিবর্তন হয়েছে, সামনে আরও হবে।

বিচারব্যবস্থা যেদিন স্মার্ট হবে, সেদিন বাংলাদেশ স্মার্ট হবে, মেট্রোরেল, পাতালরেলে স্মার্ট হবে না বলে জানান ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থা দুর্বল হলে দেশ স্মার্ট হবে না। গণতন্ত্রের পূর্ব শর্তই হচ্ছে আইনের শাসন। ত্বকী হত্যার বিচার হোক।

বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির যে যুগ শুরু হয়েছে এখনো সেটা সম্পূর্ণ দূর করতে পারিনি। এখন অনেক জায়গায় ক্ষমতাসীনদের জন্য আমরা, বিচারব্যবস্থা অনুগত হয়ে যাই এবং আমরা সুবিচার পাই না।’ দেরিতে হলেও ত্বকী হত্যার বিচার হবে এবং সমাজে সুস্থতা ফিরে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক ও ত্বকীর বাবা রাফিউর রাব্বি সভাপতির বক্তব্যে বলেন, তরুণ প্রজন্ম দেশ ছাড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে। কারণ, তারা দেশটাকে নিজের মনে করতে পারে না। শাসকগোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করতে পারে না। তারা নিরাপদ বোধ করে না। দেশের টাকা পাচার হচ্ছে, মর্যাদা নিশ্চিত হচ্ছে না। কিন্তু দেশটাকে নিজেদেরই রক্ষা করতে হবে। তিনি আশা করেন, তরুণ প্রজন্ম দেশকে দুর্বৃত্তের হাত থেকে রক্ষা করবে।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন ত্বকী। ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।

ত্বকীর ২৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে অষ্টম জাতীয় চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা হয়। সারা দেশ থেকে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় দুই বিভাগেই তিনটি শ্রেণিতে ১০ জন করে মোট ৬০ জনকে পুরস্কৃত করা হয়। এ ছাড়া প্রতিটি শ্রেণিতে একজনকে ত্বকী পদক দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক শওকত আরা হোসেন, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ এবং ত্বকীর মা রওনক জাহান।