বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। উদার গণতন্ত্র সূচক, নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকসহ মোট চারটি সূচকে বাংলাদেশের স্কোর কমেছে।
সুইডেনভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান ভ্যারাইটিজ অব ডেমোক্রেসির (ভি-ডেম) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। ভি-ডেমের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ বছরের প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘ডেমোক্রেসি উইনিং অ্যান্ড লুজিং অ্যাট দ্য ব্যালট’ (নির্বাচনে গণতন্ত্রের জয়–পরাজয়)। আট বছর ধরে বৈশ্বিক শাসনব্যবস্থা নিয়ে ‘গণতন্ত্র প্রতিবেদন’ প্রকাশ করে আসছে সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভি-ডেম ইনস্টিটিউট।

ভি-ডেমের এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উদার গণতান্ত্রিক সূচকে (লিবারেল ডেমোক্রেসি ইনডেক্সে) ১৭৯টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম, স্কোর শূন্য দশমিক ১০। গতবারের প্রতিবেদনে এই সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪৭তম। তবে আগের চেয়ে স্কোর কমেছে শূন্য দশমিক ০১।

প্রতিবেদনে ‘নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে’ (ইলেক্টোরাল ডেমোক্রেসি ইনডেক্স) বাংলাদেশের অবনমন হয়েছে। সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৩৬তম, স্কোর শূন্য দশমিক ২৫। আগের বছরে বাংলাদেশের অবস্থান ও স্কোর ছিল যথাক্রমে ১৩১ ও শূন্য দশমিক ২৮।

লিবারেল (উদার) কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৫১তম এবং স্কোর শূন্য দশমিক ২২। এই সূচকে গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ও স্কোর ছিল ১৫৫তম ও শূন্য দশমিক ২৪। এখানে ধাপের দিক থেকে বাংলাদেশ এগোলেও স্কোরের দিক দিয়ে পিছিয়েছে।

আর ইগলিট্যারিয়ান (সমতা) কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে গতবার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৫তম। এবার অবস্থান হয়েছে ১৬৭তম। এই সূচকে স্কোর কমে এবার দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ২৪, গতবার যা ছিল শূন্য দশমিক ২৫।

এবারের প্রতিবেদন বলছে, দুটি সূচকে বাংলাদেশের স্কোর গতবারের তুলনায় কমেনি। পার্টিসিপেটরি (অংশগ্রহণমূলক) কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশের এবারের অবস্থান ১৪৩তম, স্কোর শূন্য দশমিক ৩। গতবার একই স্কোর নিয়ে বাংলাদেশে ১৪২তম অবস্থানে ছিল। ডেলিবারেটিভ (সিদ্ধান্তমূলক) কম্পোনেন্ট ইনডেক্সে বাংলাদেশ গতবারের তুলনায় ৩ ধাপ পিছিয়ে ১৪৮তম অবস্থানে আছে। তবে এবার স্কোর বেড়ে শূন্য দশমিক ৩০ হয়েছে, আগে যা ছিল শূন্য দশমিক ২৯।

ভি-ডেম ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শাসনতান্ত্রিক দিক থেকে বাংলাদেশ আছে ‘নির্বাচনভিত্তিক স্বৈরতন্ত্র’ (ইলেক্টোরাল অটোক্রেসি) বিভাগে। এর অর্থ হলো, এ দেশে গণতন্ত্র অপস্রিয়মাণ। আর সে জায়গায় ধীরে ধীরে স্থান করে নিচ্ছে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের প্রতিবেদনেও এমনটাই ছিল।

বাংলাদেশের প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান আছে ‘নির্বাচনভিত্তিক স্বৈরতন্ত্র’ বিভাগে। প্রতিবেদন বলছে, ভারতের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতিরও অবনতি হয়েছে। উদার গণতান্ত্রিক সূচকে ভারতের অবস্থান ১০৪তম। নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে ১১০তম। উভয় ক্ষেত্রে ভারত পিছিয়েছে। পিছিয়েছে পাকিস্তানও, উদার গণতান্ত্রিক সূচকে ১০৬তম অবস্থান থেকে ১১৯তম অবস্থানে নেমে গেছে। আর নির্বাচনভিত্তিক গণতন্ত্রের সূচকে ১১০তম অবস্থান থেকে নেমে গেছে ১১৮তম অবস্থানে।

ভি-ডেমের প্রতিবেদনে উদার গণতান্ত্রিক সূচকে শীর্ষ তিন স্থানে আছে যথাক্রমে ডেনমার্ক, সুইডেন ও এস্তোনিয়া। গতবার এই সূচকের শীর্ষ তিন স্থানে ছিল যথাক্রমে ডেনমার্ক, সুইডেন ও নরওয়ে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে স্বৈরতান্ত্রিক অঞ্চল। এই অঞ্চলের প্রতি ১০ জনের ৯ জন মানুষ নির্বাচনী স্বৈরতন্ত্রের দেশে বসবাস করেন।