বরেন্দ্র অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দূর করতে ঢাবি অধ্যাপকের নতুন মডেল

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ বদরুল হাসান
ছবি: প্রথম আলো

ফারাক্কা বাঁধ ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানিতে আয়রন ও আর্সেনিকের উপস্থিতি তো আছেই। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি–বেসরকারি উদ্যোগে খাওয়ার পানির নানা ধরনের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এই এসব প্রকল্প টেকসই হচ্ছে না। এই সমস্যা সমাধানে নতুন একটি মডেল উপস্থাপন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ বদরুল হাসান।

আজ মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সেমিনারকক্ষে আয়োজিত ‘কমিউনিটিভিত্তিক খাওয়ার পানির অবকাঠামো ব্যবস্থাপনা: বাংলাদেশের বরেন্দ্র অঞ্চলে কমিউনিটি ম্যানেজমেন্ট (সিএম) প্লাস মডেলের সম্ভাব্যতা পরীক্ষা’ শীর্ষক সেমিনারে পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ মুহাম্মদ বদরুল হাসানের মূল প্রবন্ধে এ বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ গবেষণা অনুদানের আওতায় পরিচালিত গবেষণায় এই তথ্য উঠে আসে।

এর আগে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় অঞ্চলে পরিচালিত গবেষণায় ঢাবির এই সহযোগী অধ্যাপক এই মডেল উপস্থাপন করেন। তাঁর ধারণার মূল কথা হলো সুপেয় পানি নিশ্চিতে শুধু প্রকল্প বাস্তবায়নই শেষ নয়, তা টেকসই করতে হলে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ দরকার। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতা, কমিউনিটি পর্যায়ে পারস্পরিক সুসম্পর্ক প্রয়োজন। সুপেয় পানির অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা ও ব্যবহারকারী উভয়ে মিলে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই অবকাঠামোগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করবে। এ ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকবে। আর এই সমন্বয় সাধনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রক্রিয়াকেই তিনি সিএম প্লাস মডেল হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

মডেলের বিষয়ে এই পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ বলেন, সিএম প্লাস মডেল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রেক্ষাপটে কার্যকর। কিন্তু দেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই মডেল বাস্তবায়নযোগ্য কি না, তা যাচাই করতে বরেন্দ্র অঞ্চলে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। সেখানেও এ মডেল অনেকাংশে কার্যকর হবে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

সেমিনারে পানিবিশেষজ্ঞ কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ বলেন, দিন দিন হাইড্রো পলিটিকস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। আগামী দিনে পানিসংকট ও পানি দারিদ্র্য আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। এ ক্ষেত্রে গবেষকের উপস্থাপন করা পানি ব্যবস্থাপনা মডেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি আরও বলেন, ‘আগামী প্রজন্মের জন্য পানি না রেখে গেলে তারা আমাদের অভিসম্পাত করবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পানিবিশেষজ্ঞ অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ। সেমিনারে বক্তব্য দেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক জিয়া রহমান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শান্তনু মজুমদার, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইন্টারন্যাশনাল ট্রেনিং নেটওয়ার্কের পরিচালক (আইটিএন) পরিচালক অধ্যাপক তানভীর আহমেদ ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান।

আরও পড়ুন

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ সোহরাব হোসেন, অধ্যাপক স ম আলী রেজাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পানিবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ।

সমাপনী বক্তব্যে ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, এই গবেষণার একটি বিশেষ দিক হলো রাজনীতিকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। তিনি এই উদ্ভাবনকে অন্তর্ভুক্তিমূলক করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।         

আরও পড়ুন