মারধরের শিকার রোগী ও স্বজনদের বিরুদ্ধে মামলা দিল পুলিশ

কিডনি ডায়ালাইসিসের ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকের সামনে সড়ক অবরোধ করেন রোগী ও স্বজনেরা। এক পর্যায়ে পুলিশ তাঁদের কয়েকজনকে মারধর করে সেখান থেকে উঠিয়ে দেয়
ছবি: জুয়েল শীল

ডায়ালাইসিসের বর্ধিত ফি কমানো এবং ভর্তুকি বহাল রাখার দাবিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে রোগী ও স্বজনেরা সড়ক অবরোধ করলে তাঁদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। এ ঘটনায় সেই রোগী ও স্বজনদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগ এনে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে পাঁচলাইশ থানায় উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান এ মামলা করেন।

মামলায় আসামি হিসেবে একজনের নাম উল্লেখ করেছেন উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর। মো. মোস্তাকিম নামের ওই ব্যক্তিকে মঙ্গলবার দুপুরে সড়ক অবরোধের সময় আটক করেছিল পুলিশ। তিনি ছাড়াও মামলায় অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে বাদীসহ ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক সাদেকুর রহমান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়েছে। আহতরা চিকিৎসা নিয়েছেন।

এর আগে দুপুর ১টার দিকে ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চমেক হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। আসাদুল হক নামে এক রোগী বলেন, তাঁরা ফি কমানোর দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাদের মারধর করেছে। তিনি নিজেও পুলিশের মারধরের শিকার হয়েছেন।  

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিসের বর্ধিত ফি কমানো ও ভর্তুকি বহাল রাখার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন রোগী ও স্বজনেরা। এ সময় পুলিশের মারধরে আহত হন রোগী আসাদুল হক। গতকাল দুপুরে হাসপাতাল ফটকের সামনে
ছবি: জুয়েল শীল

পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাজিম উদ্দীন মজুমদারের নেতৃত্বে পুলিশ সড়ক থেকে টেনেহিঁচড়ে রোগী ও স্বজনদের তুলে দেন বলে অভিযোগ করা হচ্ছে। এ সময় কয়েকজনকে কিল ঘুঁষি দেওয়ারও অভিযোগ করেন রোগীরা। তবে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি মো. নাজিম উদ্দীন মজুমদার। তিনি দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, এক স্বজন পুলিশের কাজে বাধা দেয়। তাঁকে আটক করা হয়। রোগীদের মারধর করা হয়নি।

ডায়ালাইসিস ফি কমানোর দাবিতে চার দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেলের নিচতলায় স্যানডোর ডায়ালাইসিস প্রাইভেট লিমিটেডের সামনে বিক্ষোভ করে আসছিলেন রোগী ও স্বজনেরা। মঙ্গলবার তারা হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনের কেবি ফজলুল কাদের সড়ক অবরোধ করেন।

রোগীদের অভিযোগ, স্যানডোর এত দিন দুটি মূল্যে ডায়ালাইসিস সেবা দিত। এর মধ্যে ভর্তুকির যে সেবা দিত, তার মূল্য ছিল ৫১০ টাকা। তা বেড়ে এখন ৫৩৫ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তুকি ছাড়া ২ হাজার ৭৮৫ টাকায় যে ডায়ালাইসিস সেশন চালাত, তা করা হয়েছে ২ হাজার ৯৩৫ টাকা। আবার এত দিন যাঁরা মাসে ৮টি সেশন ভর্তুকি মূল্যে ডায়ালাইসিস করাতে পারতেন, তাঁদের এখন থেকে অর্ধেক পুরো ফিতে করতে হবে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এ কারণে রোগী ও স্বজনেরা শনিবার থেকে আগের ফি এবং ভর্তুকি সেশন আগের মতো বহাল রাখার দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি–বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) আওতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের কিডনি রোগীদের জন্য ২০১৭ সালের ৫ মার্চ ৩১টি মেশিন নিয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টারটি চালু করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী স্যান্ডোর এই সেন্টারে তাদের কার্যক্রম ১০ বছর চালিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন