সুদানে নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর মরদেহ ফিরছে শনিবার

সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের ঘাঁটিতে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় শাহাদাতবরণকারী বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় শান্তিরক্ষীছবি: আইএসপিআর

সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ছয় শান্তিরক্ষীর মরদেহ শনিবার দেশে আনা হচ্ছে। শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। দেশে পৌঁছানোর পর রাষ্ট্রীয় ও সামরিক মর্যাদায় তাঁদের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে।

আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৩ ডিসেম্বর সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কাদুগলি লজিস্টিকস বেইসে বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠী বর্বরোচিত ড্রোন হামলা চালায়। এতে ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত ও নয়জন আহত হন।

নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন নাটোরের করপোরাল মো. মাসুদ রানা, কুড়িগ্রামের সৈনিক মো. মমিনুল ইসলাম ও সৈনিক শান্ত মণ্ডল, রাজবাড়ীর সৈনিক শামীম রেজা, কিশোরগঞ্জের মেস ওয়েটার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এবং গাইবান্ধার লন্ড্রি কর্মচারী মো. সবুজ মিয়া।

আহত নয়জন শান্তিরক্ষী কেনিয়ার নাইরোবির আগা খান ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়েছেন এবং বাকিরা শঙ্কামুক্ত বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। আহতদের মধ্যে তিনজন নারী সদস্য রয়েছেন।

আহত সেনাসদস্যরা হলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল খোন্দকার খালেকুজ্জামান, সার্জেন্ট মো. মোস্তাকিম হোসেন, করপোরাল আফরোজা পারভিন, ল্যান্স করপোরাল মহিবুল ইসলাম, সৈনিক মো. মেজবাউল কবির, সৈনিক মোসা. উম্মে হানি আক্তার, সৈনিক চুমকি আক্তার ও সৈনিক মো. মানাজির আহসান।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, জাতিসংঘের পতাকাতলে বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় জীবন উৎসর্গ করা এই ছয় সেনাসদস্যের আত্মত্যাগ শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অঙ্গীকারের এক উজ্জ্বল ও গৌরবময় দৃষ্টান্ত।

আইএসপিআর বলছে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অবদান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন শুরু হলেও বাংলাদেশ এতে যুক্ত হয় ১৯৮৮ সালে। ইরান-ইরাক সামরিক পর্যবেক্ষক মিশনে ১৫ জন সদস্য পাঠানোর মাধ্যমে এই যাত্রার সূচনা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১০টি দেশে শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করছে। প্রথমবারের মতো ডিআর কঙ্গোতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টারও মোতায়েন করা হয়েছে।

শুরু থেকে এ পর্যন্ত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ১৬৮ জন সদস্য প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ১৩১ জন, নৌবাহিনীর ৪ জন, বিমানবাহিনীর ৬ জন এবং পুলিশের ২৪ জন সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২৭২ জন। সেনাসদস্যদের পাশাপাশি বাংলাদেশি চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরাও বিভিন্ন মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছেন।

যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের কল্যাণ, পুনর্গঠন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং নারী ও শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা আলাদাভাবে প্রশংসিত। বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশের এই ভূমিকার জন্য দেশটিকে ‘শান্তির কূটনীতির মোরসাল’ হিসেবেও অভিহিত করে।

সুদানসহ বিশ্বের বিভিন্ন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার কঠিন দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করা এই ছয় বীরের মরদেহ শনিবার তাঁদের প্রিয় মাতৃভূমির মাটি স্পর্শ করবে। রাষ্ট্রীয় সম্মানে তাঁদের শেষ বিদায় জানাতে প্রস্তুত পুরো দেশ।