যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র একটি বাড়ি আছে, তা–ও স্ত্রীর কেনা: তাকসিম এ খান

ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান
ফাইল ছবি

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর পরিবারের মাত্র একটি বাড়ি রয়েছে। সেখানে ১৪টি বাড়ি থাকার যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই।  তিনি বলেছেন, ‘শুধু একটি বাড়ি রয়েছে, সেটি আমার স্ত্রীর কেনা। এর বাইরে কোনো বাড়ি নেই।’

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তাকসিম এ খান এসব কথা বলেন। ‘ওয়াসার তাকসিমের যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ বাড়ি!’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে গতকাল সোমবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়া অভিযোগের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। দুদকের একজন আইনজীবী প্রতিবেদনটি গতকাল হাইকোর্টের নজরে আনলে আদালত বলেছেন, এ বিষয়ে দুদক যাচাই–বাছাই করতে পারে।

খবরটি নিয়ে আলোচনা–সমালোচনার মধ্যে আজ কয়েকটি গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন তাকসিম এ খান। তবে সব গণমাধ্যমের কর্মীদের ওয়াসা ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অনেক সাংবাদিক ওয়াসা ভবনের ফটক থেকে ফিরে যান।

আরও পড়ুন

তাকসিম এ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ১৪টি বাড়ি কেনার বিষয়ে যে প্রতিবেদন এসেছে, তা ডাহা মিথ্যা। প্রতিবেদনে শুধু একটি বিষয় ঠিক লিখেছে, সেটা হচ্ছে আমার যুক্তরাষ্ট্রের সিটিজেনশিপ। আমার স্ত্রীসহ আমার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা। আমাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এনে ওয়াসার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।’

তাকসিম এ খান বলেন, তাঁর স্ত্রী-সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে ওয়েল স্ট্যাবলিশড (ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত), তাই সেখানে একটি বাড়ি কেনায় খুব অসুবিধার কিছু নেই। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর নামেই ওই একটা বাড়ি আছে। সেটাকেও বাড়ি বলা যাবে না, এটা একটা অ্যাপার্টমেন্ট।’

আরও পড়ুন

গতকাল ওয়াসার এমডির বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একটি-দুটি নয়, ১৪ বাড়ি! দেশে নয়, সুদূর যুক্তরাষ্ট্রে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কিনেছেন এসব বাড়ি। সব বাড়ির দাম টাকার অঙ্কে হাজার কোটি ছাড়াবে। দেশ থেকে অর্থ পাচার করে তিনি এসব বাড়ির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বাড়ি কেনার অর্থের উৎস ও লেনদেন প্রক্রিয়ার তত্ত্বতালাশে নেমেছে ইন্টারপোলসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বিপুল পরিমাণ অর্থে একের পর এক বাড়ি কেনার ঘটনায় দেশটির গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’

এক যুগের বেশি সময় ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন তাকসিম এ খান। তাঁর পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য তিনি প্রায় প্রতিবছরই একটি নির্দিষ্ট সময় সেখানে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করেও তাঁর ওয়াসার এমডির দায়িত্ব পালনের ইতিহাস রয়েছে। গেল বছরও তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করে ওয়াসার দায়িত্ব পালন চালিয়ে যাওয়ার আবেদন করলে তা অনুমোদন করেনি ঢাকা ওয়াসা বোর্ড।

আরও পড়ুন

এদিকে ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে তাকসিম এ খানের বেতন বৃদ্ধি নিয়েও আলোচনা রয়েছে। তাকসিম ২০০৯ সালে ওয়াসার দায়িত্ব নেওয়ার পর তাঁর মাসিক বেতন বেড়েছে ৪২১ শতাংশ। সর্বশেষ করোনা মহামারির মধ্যে একলাফে ওয়াসার এমডির বেতন বাড়ানো হয় পৌনে দুই লাখ টাকা। এই বৃদ্ধির পর ওয়াসার এমডি হিসেবে তাঁর মাসিক বেতন দাঁড়ায় ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। তাকসিমের পর যাঁরা ওয়াসার এমডি হবেন, তাঁরা যেন এ পরিমাণ বেতন না পান, তা নিশ্চিত করেছে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

তাকসিম এ খান সংবাদ সম্মেলনে কথা বললেও ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের প্রবেশ ছিল নিয়ন্ত্রিত। সমকাল পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি অমিতোষ পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংবাদিক সম্মেলনের খোঁজ পেয়ে সাড়ে ১০টার দিকে ওয়াসা ভবনে যাই। সেখানে নিরাপত্তারক্ষী নির্দিষ্ট তালিকা ধরে সাংবাদিকদের ঢুকতে দিচ্ছিলেন। তখন কয়েকটি প্রিন্ট, টেলিভিশন, অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিক বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।’ 

তবে ওয়াসার উপপ্রধান জনতথ্য কর্মকর্তা এ এম মোস্তফা তারেক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওয়াসা কোনো আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেনি। কিছু সাংবাদিক প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বক্তব্য জানতে চান। যাঁরা অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের সঙ্গে এমডি কথা বলেছেন।’

তাকসিম এ খান
ফাইল ছবি

ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের ঢুকতে না দেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে নগর উন্নয়ন সাংবাদিক ফোরাম বাংলাদেশ (ইউডিজেএফবি)। ইউডিজেএফবির সভাপতি অমিতোষ পাল ও সাধারণ সম্পাদক সোহেল মামুন এক বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বরাবরই পেশাদার সাংবাদিকদের এড়িয়ে বিভিন্ন সভা–সেমিনার করে থাকেন। অনেক সংবাদ সম্মেলনেই সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। পছন্দের দু–চারজনকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

ইউডিজেএফবির পক্ষ থেকে বলা হয়, একটি বিশেষ তালিকায় নাম থাকা কয়েকজন সাংবাদিকের বাইরে কাউকেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। একটি সরকারি সংস্থার সংবাদ সম্মেলনে যাওয়া সাংবাদিকদের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেওয়া স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য হুমকি। পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার শামিল।

আরও পড়ুন