ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি আছে: ইফতেখারুজ্জামান

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান (ডান থেকে দ্বিতীয়)। ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪: পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে। মাইডাস সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা, ২৮ এপ্রিলছবি: আশরাফুল আলম

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, দেশের সমাজ ক্রমাগত নজরদারির দিকে যাচ্ছে। সরকার ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার নামে যে আইনটি করতে যাচ্ছে, সেখানে এখনো ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রণের ঝুঁকি আছে। এ ছাড়া সামনে যেসব আইন-নীতি আসছে, সেখানেও নজরদারির আশঙ্কা রয়েছে।

আজ রোববার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন, ২০২৪: পর্যালোচনা ও সুপারিশ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ইফতেখারুজ্জামান। টিআইবি ও আর্টিকেল নাইনটিন যৌথভাবে এই সংবাদ সম্মেলন করে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপাত্ত সুরক্ষা আইনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। সেখানে চেতনার জায়গায় স্পষ্টভাবে মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো থাকতে হবে।

ব্যক্তি ও ব্যক্তিগত তথ্যের সংজ্ঞা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে বলে উল্লেখ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক। তিনি বলেন, এখানে স্পষ্টতা না থাকলে কর্তৃপক্ষ যারা আছে, তাদের হাতে সুযোগ থেকে যাবে যে তারা কোনটাকে কখন ব্যক্তিগত তথ্য মনে করছে। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তার নামে, জনস্বার্থের নামে, বেশ কিছু সংস্থাকে ব্যক্তিগত তথ্যে অবাধ অভিগম্যতার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এখানে বিচারিক ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। দেশে জাতীয় স্বার্থ, সরকারি স্বার্থ ও জনস্বার্থ এক হয়ে যায়।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকার নিজেই ব্যক্তিগত তথ্যের ব্যবহারকারী। সে ক্ষেত্রে স্বার্থের সংঘাত ঘটার আশঙ্কা আছে, যদি সরকারনিয়ন্ত্রিত কমিশন বা বোর্ড হয়। তাই স্বাধীন ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইনের সবশেষ খসড়ার ওপর পর্যালোচনা তুলে ধরেন আর্টিকেল নাইনটিনের আঞ্চলিক পরিচালক (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়া) শেখ মনজুর-ই-আলম। খসড়ায় কিছু সংশোধনের দাবি জানিয়ে তিনি সুপারিশ তুলে ধরেন।

সুপারিশগুলো হলো—মৌলিক অধিকার রক্ষা ও ব্যক্তিগত তথ্য কোনগুলো হবে, তা স্পষ্ট করা। উপাত্ত স্থানীকরণের বাধ্যবাধকতা থাকলে নিরাপত্তা ঝুঁকিসহ অবকাঠামোগত দিক থেকে বাস্তবায়নে যৌক্তিকতা বিবেচনায় নেওয়া। সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে স্বাধীন ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা কমিশন গঠন। ব্যক্তিগত তথ্যে অভিগম্যতার প্রয়োজন হলে সেখানে বিচারিক ভূমিকা থাকা। জনস্বার্থের বিষয়গুলো স্পষ্ট করা। আইনটি প্রয়োগের জন্য একটি ‘টাইমলাইন’ ঠিক করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের ও আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।