করোনাকালে ত্রাণ পেতে ৩৩৩ নম্বরে ফোন বাড়ছে

নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় ফোন পাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসন চাল, ডালসহ বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা হিসেবে দিচ্ছে। তবে চাহিদার তুলনায় সহায়তা কম।

অসহায় এক নারীর হাতে ত্রাণ তুলে দিচ্ছেন ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও মো. জাকির হোসেন (সাদা শার্ট পরা)
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেনের কাছে গত কয়েক দিনে ২৯ জন মানুষ সহায়তা চেয়েছেন। তাঁরা ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে এই সহায়তা চেয়েছেন। জাকির হোসেন জানালেন, এর মধ্যে ১৬ জনকে সহায়তা দিয়েছেন তাঁরা। সহায়তা পাওয়া এসব মানুষের মধ্যে অনেকের অবস্থা বেশ সঙিন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন এক সেলুনকর্মী, দোকানকর্মী এক নারী। কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা বেকার হয়ে পড়েছিলেন।

আবার ফোন পেয়ে সহায়তা দেওয়া যায়নি এমন পরিবারও আছে। যাঁদের ঠিকানায় গিয়ে পাকা বাড়ি পাওয়া গেছে। জানা গেছে তাঁরা সচ্ছল। এমন ছয়টি পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়নি বলে জানালেন ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও। বাকি কয়েকজনের ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। সহায়তা হিসেবে চাল, ডাল, তেল,আলু, চিনি, সেমাই ও সাবান দিচ্ছেন তাঁরা।

শুধু  ঈশ্বরগঞ্জ নয়, এখন সারা দেশে অসংখ্য মানুষ সরকারের জরুরি হটলাইন ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে ত্রাণসহায়তা চাইছেন। তাঁদের সাধ্যমতো সহায়তা দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে সবাই এখনো পাননি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং এটুআই কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল থেকে ৪ মে পর্যন্ত ত্রাণসহায়তার জন্য ৮ লাখ ৭ হাজার ৮১৯টি ফোনকল আসে ‘৩৩৩’ নম্বরে। এর মধ্যে ৪ মে এক দিনেই ফোন আসে ১ লাখ ১৮ হাজার ৫৪৭টি। এসব ফোনের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ও ভুল ফোনও রয়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ৩৯ হাজার ৭৫০ জনকে প্রাথমিকভাবে সহায়তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মোট সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১৮ হাজার ৫০০ জনকে।

করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধে দরিদ্র ও কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা দিতে জরুরি হটলাইন ‘৩৩৩’ (সরকারি তথ্য ও সেবা) নম্বরটি কাজে লাগাচ্ছে সরকার। সরকারের এটুআই কর্মসূচির অধীনে চলা এই হটলাইনের মাধ্যমে দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে এসব সহায়তা দিচ্ছে। এই হটলাইন আগে থেকে চললেও খাদ্যসহায়তার বিষয়টি মাঝে বন্ধ ছিল। গত ২৫ এপ্রিল থেকে খাদ্যসহায়তা দেওয়ার সেবাটি আবারও সচল করা হয়।

গত ২৫ এপ্রিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমরা ৩৩৩ নম্বরটি প্রচার করেছি। কেউ খাদ্যকষ্টে থাকলে ফোন করলে তাঁকে তালিকাভুক্ত করে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হবে।’

# ১০ দিনে ৮,০৭,৮১৯টি ফোনকল। # প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে ৩৯,৭৫০ জন ত্রাণের জন্য নির্ধারণ। # সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১৮,৫০০ জনকে

মূলত এরপর এটুআইয়ের এই সেবা সচল হয়। এটুআই কর্মসূচির একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করে একাধিক সেবা পাওয়া যায়। এর মধ্যে করোনা মোকাবিলা ও জরুরি খাদ্যসহ অন্যান্য সেবার জন্য প্রথমে ‘৩৩৩’ গিয়ে তারপর ‘৩’ চাপ দিতে হয়। তখন ফোন করলে প্রথমেই কিছু বিষয় জানতে চাওয়া হয়।

যেমন, ফোন করা ব্যক্তি বা তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য সরকারি ত্রাণ বা ভাতা, ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) বা ১০ টাকা কেজি দরে চাল পেয়েছেন কি না—এ ধরনের কিছু প্রশ্ন করা হয়। যত ফোন আসে তার অনেকগুলো আবার প্রয়োজনীয় নয় বা ভুল। তাই তথ্য যাচাই-বাছাই করে ত্রাণ পাওয়ার মতো ব্যক্তিদের প্রাথমিক তালিকা নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়। এর ভিত্তিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হয়।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আতিকুল হক প্রথম আলোকে বলেন, গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার মানুষকে এই ফোনের ভিত্তিতে সহায়তা করা হয়েছে। যাঁরা পাওয়ার মতো যোগ্য, তাঁদের দেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকে ভুল তথ্যও দেন। যেমন শুরুর দিকে মানিকগঞ্জের এক ব্যক্তি সহায়তার জন্য ফোন দিয়েছিলেন। কিন্তু দিতে গিয়ে দেখা যায়, ওই ব্যক্তির তিনতলা বাড়ি।

দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষকে মানবিক সহায়তা দিতে সরকার এ পর্যন্ত ৫৭৪ কোটি ৯ লাখ ২৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এখান থেকেই প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন মাধ্যমে এই সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টির মতো ফোন পান তাঁরা। এর ভিত্তিতে এই পর্যন্ত অর্ধশত মানুষকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয় প্যাকেটজাত চাল (পাঁচ কেজি), আলু, পেঁয়াজ, চিনি, চিড়া ও মুড়ি। এ খাতের জন্য ৭৫ হাজার টাকার মতো আপৎকালীন বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

তবে সহায়তার বিষয়টি এলাকাভেদে ভিন্নতা আছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে বিধিনিষেধ চলছে। ১৬ মে পর্যন্ত চলবে এই বিধিনিষেধ। এর ফলে অসংখ্য মানুষ কাজ হারিয়ে ফেলেছে। বিশেষত পরিবহন খাতের শ্রমিকেরা এবার বেশি সমস্যায় পড়েছেন। কারণ, গণপরিবহন বেশি সময় ধরে বন্ধ। এখনো দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন বন্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাঠ প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন করার ভিত্তিতে সহায়তা দেওয়ার জন্য আরও বেশি বরাদ্দ দেওয়া উচিত।