করোনা বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধিতে অনীহা

গণপরিবহনে বেশির ভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। বরিশাল নগরে গতকাল
প্রথম আলো

দেশে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। রাজশাহী ও বরিশালে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। রাজশাহীতে গত শুক্রবার পাওয়া হিসাবে সংক্রমণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। বরিশালে এই হার ওঠানামা করছে। গতকাল শনিবার শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। তবে আগের দিন শুক্রবারের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। ওই দিনের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। চট্টগ্রামেও সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। জেলায় গতকাল সংক্রমণ ছিল প্রায় ১২ শতাংশ। করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হলেও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।

রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৫.৭১ শতাংশ

রাজশাহীতে এক দিনের ব্যবধানে করোনা শনাক্তের হার ৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে গত শুক্রবার ছিল ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ। তবে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হওয়ায় এই হার আমলে নেওয়া হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। গত বৃহস্পতিবার শনাক্তের হার ছিল ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

৭ ও ৮ জুনের পরীক্ষায় রাজশাহী জেলায় কোনো করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। এরপর থেকে ধীরে ধীরে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। তবে বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বা উপজেলার কোনো হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি নেই। শনাক্ত ব্যক্তিদের সবাই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রাজশাহী সিভিল সার্জন আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, মানুষের মধ্যে এবার সচেতনতা একটু কম। তবে তাঁরা প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, সংক্রমণ বাড়লেও এবার হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমই হবে। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ‘ফ্লু’ সংক্রমণের সময়। এ জন্য এখন ঘরে ঘরে জ্বর হচ্ছে।

জেলায় মানুষের মাস্ক পরার হার খুব কম। গত শুক্রবার থেকে রাজশাহী নগরের সাগরপাড়ায় রাস্তার দুই পাশে রথের মেলা হচ্ছে। মেলা ঘুরে দেখা গেছে, মানুষের মধ্যে কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। হাজারও মানুষের মধ্যে দু–একজনের মুখে মাস্ক দেখা গেছে।

বরিশালে শনাক্তের হারে চিন্তায় বিশেষজ্ঞরা

শুক্রবার সকাল অটটা থেকে গতকাল সকাল অটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত বরিশাল জেলায় ১৭ জন।

তবে এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগে ১২০ জনের মধ্যে ৭১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। শনাক্তের হার ছিল ৫৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। এ সময় বরিশাল জেলায় ৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫২ জনেরই করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ছিল ১০০ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, জুনের শেষ দিক থেকে বিভাগে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। টানা তিন দিনে সংক্রমণের আশঙ্কাজনক উল্লম্ফন দেখা যাচ্ছে।

সরকার মাস্ক পরার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করলেও দোকান, শপিং মল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বেশির ভাগ মানুষই মাস্ক পরছেন না। গতকাল বরিশালের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ মানুষই মাস্ক ছাড়াই বাজারে ও জনবহুল এলাকায় স্বাভাবিক চলাচল করছেন। নগরের চকবাজার, বাজার রোড, সদর রোড, বাংলাবাজার, চৌমাথা, সাগরদি, রূপাতলী, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে মাস্ক ছাড়াই লোকজনকে দেখা গেছে। এ নিয়ে প্রশাসনেরও কোনো তদারকি চোখে পড়েনি।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ক্রমেই সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মাস্ক পরার ব্যাপারে এখন যেভাবে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে, সেটা আশঙ্কার বিষয়।

চট্টগ্রামে সংক্রমণ ১০ শতাংশের বেশি

চট্টগ্রামে প্রতিদিন করোনা শনাক্তের হার ১০ শতাংশের বেশি। সাড়ে চার মাস পর গত শুক্রবার করোনায় একজনের মৃত্যুও হয়েছে। গত এক সপ্তাহে চট্টগ্রামে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩৮৮ জন। সর্বশেষ গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হন ৪৩ জন। শনাক্তের হার ১২ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

তবে শনাক্তের হার বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তি রোগী কম। সব মিলিয়ে ৩০ জন কোভিড রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়।

সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, করোনা সংক্রমণের হার প্রতিদিনই ১০ শতাংশের ওপর হচ্ছে। কিন্তু গুরুতর রোগী কম। তাই হাসপাতালে ভর্তি নেই। টিকা দেওয়া থাকায় বেশি সমস্যা হচ্ছে না। সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।