করোনা সচেতনতা বাড়াতে গ্রামে গ্রামে নানা কর্মসূচি

ব্র্যাকের কর্মীদের মাধ্যমে ৫ হাজার ২০৭ জন কোভিড টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন। চিকিৎসা–সংক্রান্ত পরামর্শ নিয়েছেন ৪৩৬ জন।

করোনা প্রতিরোধে ব্র্যাকের সামাজিক দুর্গ কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত হয় মাসিক সভা। গত বুধবার দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস গ্রামের সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিক চত্বরে।
ছবি: প্রথম আলো

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্র্যাকের ‘সামাজিক দুর্গ’ কর্মসূচি লালমনিরহাটের গ্রামে গ্রামে সাড়া ফেলেছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে বাড়ির উঠানে বসেই হচ্ছে কোভিড টিকার নিবন্ধন। টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে মিলছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। হাটবাজার, মসজিদ, মন্দিরসহ গ্রামের বাড়ি বাড়ি বিতরণ করা হচ্ছে মাস্ক, সচেতনতামূলক লিফলেট।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা প্রকল্পের আওতায় গত ১৩ জুন থেকে জেলার পাঁচটি উপজেলায় ‘কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সামাজিক দুর্গ’ কর্মসূচি শুরু হয়। প্রকল্পের লালমনিরহাট কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ উপজেলায় প্রায় সাড়ে সাত লাখ মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। ব্র্যাকের কর্মীদের মাধ্যমে ৫ হাজার ২০৭ জন কোভিড টিকা গ্রহণের জন্য নিবন্ধন করেছেন। ব্র্যাকের টেলিমেডিসিনের সহায়তায় চিকিৎসা–সংক্রান্ত পরামর্শ নিয়েছেন ৪৩৬ জন। এ কাজে ব্র্যাকের বিভিন্ন পর্যায়ের ১ হাজার ৩৭৫ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী যুক্ত। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ধর্মীয় নেতা, তরুণ–তরুণীদের যুক্ত করা হয়েছে। সক্রিয় করা হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক গ্রুপকে।

গত বুধবার সদর উপজেলার নওদাবাস গ্রামের সরকারি কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, করোনা–সংক্রান্ত ওরিয়েন্টেশন ও মাসিক সভা চলছে। কমিটির প্রায় সব সদস্য সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও মাস্ক পরে সভায় উপস্থিত হন। ব্র্যাকের কর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় বিশিষ্টজনেরাও উপস্থিত ছিলেন। সভায় করোনাকালে করণীয়, মাস্ক পরা ও ব্যবহারের নিয়ম, স্বাস্থ্য সমস্যায় ব্র্যাকের টেলিমেডিসিন সহায়তা পাওয়ার পদ্ধতি, টিকার জন্য নিবন্ধনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

সভায় উপস্থিত কলেজ শিক্ষার্থী আমিনা সিদ্দিকা (১৮) জানালেন, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে গ্রামের লোকজন এখন করোনার বিষয়ে আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন। প্রয়োজনে তাঁরা ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরেন। একে অন্যকে সচেতন করেন। তিনি নিজেও মানুষকে সচেতন করছেন।

একই দিন সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের বড়বাড়ির হাটে দেখা যায়, ব্র্যাকের করোনা হটস্পট মোবিলাইজার সাখাওয়াত হোসেন (২৫) হাটের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে করোনা–সংক্রান্ত সচেতনতামূলক লিফলেট ও মাস্ক বিতরণ করছেন। হ্যান্ড মাইকেও প্রচার করা হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা।

বড়বাড়ি ইউনিয়নের খেতাবাগ গ্রামের এজাজুল হক মাস্টারের বাড়িতে দেখা যায়, ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী মাসুদা বেগম ট্যাবের মাধ্যমে আগ্রহীদের কোভিড টিকার নিবন্ধন করে দিচ্ছেন।

গ্রামের বাসিন্দা মর্জিনা বেগম (৩৩) বলেন, ‘ব্র্যাক মাস্ক দিছে, লিফলেট দিছে, এখন করোনার টিকার নিবন্ধন করে দিল। আমরা খুশি।’ আরেক বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক এজাজুল হক (৫০) বলেন, ‘আমার ছেলের বউ অসুস্থতা বোধ করছিল। আমি ব্র্যাকের টেলিমেডিসিন থেকে চিকিৎসা পরামর্শ নিয়েছি।’

ব্র্যাকের লালমনিরহাট এলাকা ব্যবস্থাপক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের মাঠকর্মীদের কাছে কেউ অসুস্থতা নিয়ে এলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রথমে আমরা তাঁর তাপমাত্রা ও অক্সিজেনের মাত্রা মেপে দেখে টেলিমেডিসিন সহায়তার জন্য সংযোগ স্থাপন করি। এরপর ঢাকার অফিস থেকে আরও কিছু খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হয়।’

জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, ব্র্যাক একটি সামাজিক দায়িত্ব পালন করছে। এসব উদ্যোগ গ্রহণ অনুকরণীয় ও প্রশংসার যোগ্য।

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বলেন, পরিস্থিতি বিবেচনায় ও পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সিএসও অ্যালায়েন্সের (এনজিও এবং নাগরিক সংগঠনের জোট) সঙ্গে ‘করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দুর্গ’ কর্মসূচিটি হাতে নেওয়া হয়। এই কর্মসূচিতে ৪১টি এনজিও অংশ নিচ্ছে। এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, এসকেএস ফাউন্ডেশন, দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ওয়াটার এইড বাংলাদেশ এবং ব্র্যাক।