কূটনীতিক ছাড়া অন্য বিদেশিদের টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা

ফাইল ছবি
রয়টার্স

বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কূটনীতিকদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা হলেও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। তাই বিভ্রান্তিতে পড়েছেন তাঁরা। তাঁদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন মহল থেকে চাপ বাড়ছে। যেসব দেশের নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, সেসব দেশ থেকে সরকারকে টিকার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।

আবার এই বিদেশি নাগরিকেরা নিজেরাও সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করছেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) থেকেও আলাদা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় এখন দেশের নাগরিকদের টিকা দেওয়া। টিকার প্রাপ্যতার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ঢালাওভাবে বিদেশি নাগরিকদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা যাবে না।

তবে সরকারের কোনো সংস্থা যদি নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে বৈধ নাগরিকদের তালিকা দেয়, তাহলে তাঁদের টিকার ব্যবস্থা করা হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের করোনাপ্রতিরোধী টিকা দেওয়া নিয়ে জটিলতা শুরু হয় ৩ মার্চ থেকে। ওই দিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে এ/এ১/এ২/এফএ২/ ডি/এনডি/এম ক্যাটাগরির ভিসাধারী বিদেশি কূটনীতিকদের টিকা দেওয়ার কথা জানানো হয়। কিন্তু সেই প্রজ্ঞাপনে বাংলাদেশে কর্মরত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের টিকার কথা কিছুই বলা হয়নি।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ১৭ মার্চ থেকে বিদেশি কূটনীতিকদের নিবন্ধন শুরু হবে। উল্লিখিত ভিসাধারী বিদেশি নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট দূতাবাস, হাইকমিশন বা সংস্থার মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।

বেজা ও বিডার কর্মকর্তারা বলছেন, কূটনৈতিক সুবিধার বাইরে অন্য বিদেশিদের টিকার ব্যবস্থা না থাকায় চিন্তিত হয়ে পড়েন বিদেশি নাগরিকেরা। বিষয়টি তাঁরা নিজ দেশকে যেমন জানিয়েছেন, তেমনি বেজা ও বিডার কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছেন। তাঁরা আরও বলছেন, তাঁদের আওতাধীন অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বিভিন্ন প্রকল্পে ছয় শতাধিক বিদেশি নাগরিক কাজ করেন।

অন্যদিকে বিডার কর্মকর্তারা জানান, সারা দেশে ই–ভিসা বা কর্মসংস্থান ভিসায় বৈধভাবে ১০ হাজারের মতো বিদেশি নাগরিক রয়েছেন। যদিও এর বাইরে অবৈধভাবে ১০ লাখের মতো বিদেশি নাগরিক কর্মরত আছেন বলে বিভিন্ন জরিপে উঠে এসেছে।

করোনার টিকা নিচ্ছেন লোকজন
ফাইল ছবি

তাঁরা আরও জানান, তাঁরা শুধু বাংলাদেশে বৈধ বিদেশি নাগরিকের কথাই ভাবছেন। বৈধ নাগরিকদের একটি তালিকা করা হয়েছে। তাঁদের টিকার ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘কূটনৈতিক ভিসার বাইরে যেসব বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তাঁদের টিকার ব্যবস্থা করতে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছি। তাঁদের সংখ্যাই–বা কত হবে? সর্বোচ্চ ১০ হাজারের মতো। আমরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদেরও টিকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছি। এটি করতে পারলে বিদেশের মাটিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।’

টিকার নিবন্ধনের সময় বিদেশি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ থাকতে হবে অন্তত ছয় মাস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। সেই তথ্যের মধ্যে থাকবে তাঁদের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, জাতীয়তা, জেন্ডার, ভিসার ধরন, ভিসা নম্বর, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, কোম্পানির নাম ও স্থানীয় ফোন নম্বর।

অন্যদিকে বেজা থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠানো চিঠিতে সার্কুলারটি সংশোধন করে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করতে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের টিকার ব্যবস্থা করতে পারলে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকর্ষণেও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সে জন্য আমরা সব বিদেশি নাগরিকের টিকার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানিয়েছি। আশা করি, ইতিবাচক সাড়া মিলবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, টিকার নিবন্ধনের সময় বিদেশি নাগরিকদের ভিসার মেয়াদ থাকতে হবে অন্তত ছয় মাস। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। সেই তথ্যের মধ্যে থাকবে তাঁদের নাম, পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ, জাতীয়তা, জেন্ডার, ভিসার ধরন, ভিসা নম্বর, ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ, কোম্পানির নাম ও স্থানীয় ফোন নম্বর।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, তাঁদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের তালিকায় এখন দেশের নাগরিকেরা। কূটনৈতিক ভিসায় কর্মরত বিদেশিদের বিশেষ বিবেচনায় টিকা দেওয়া হচ্ছে। টিকার প্রাপ্যতার ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। তাই এখনই কূটনৈতিক ভিসার বাইরে অন্যদের টিকা দেওয়ার বিপক্ষে তাঁরা। তা ছাড়া বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা নিয়েও আছে বিভ্রান্তি। তারপরও যদি বিদেশি নাগরিকদের তালিকা পাওয়া যায়, দেশের নাগরিকদের চাহিদা পূরণ করে তবেই বিদেশি নাগরিকদের টিকা দেওয়ার কথা বলছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। এ নিয়ে সরকারের অন্য দপ্তরের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি চালাচালি চলছে।

দুটি দেশ বাংলাদেশে থাকা নিজেদের নাগরিকের জন্য টিকার ব্যবস্থা করেছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার যেসব নাগরিক কাজ করছেন, তাঁদের জন্য রাশিয়া সরকার টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। চীন সরকারও একই ব্যবস্থা করেছে। এই দুই দেশের বাইরে কোনো দেশ যদি নিজেরাই তাদের দেশের নাগরিকদের জন্য টিকার ব্যবস্থা করে, আমাদের আপত্তি নেই।’