টিকা পেতে সিনোভ্যাকের সঙ্গে আলোচনা এ সপ্তাহে

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বিভিন্ন দেশের কাছে টিকা চেয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সবাই টিকা দেবে বলেছে

চীনের সরকার আয়োজিত এক প্রদর্শনীতে সিনোভ্যাক বায়োটেকের উদ্ভাবিত সম্ভাব্য টিকা। ২৪ সেপ্টেম্বর, বেইজিং।
ছবি: রয়টার্স

চীনের সিনোভ্যাক বায়োটেক থেকে করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সরকার এ সপ্তাহে আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠীকে টিকা দেওয়া নিশ্চিত করতে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা কেনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছিল বাংলাদেশ। মে মাসের শেষ সপ্তাহে সরকারের এক অতিরিক্ত সচিব সাংবাদিকদের কাছে সিনোফার্মের টিকার দাম বলে দেন। এতে সিনোফার্ম থেকে জুন মাসে টিকার প্রথম চালান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশের চেয়ে বেশি দামে কিনেছে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ এ বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশও করেছে।

সরকার ৬ জুন সিনোভ্যাকের টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। এর আগে ১ জুন এ টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘সিনোভ্যাকের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশও জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। সিনোভ্যাকের সঙ্গে আমরা এ সপ্তাহেই আলোচনা শুরু করব।’

এদিকে চীনের সিনোফার্ম থেকে দেড় কোটি টিকা কেনার পাশাপাশি রাশিয়া থেকে এক কোটি টিকা কিনতে সরকার আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে টিকা কেনার বিষয়ে দ্বিতীয় দফা আলোচনার জন্য তারিখের অপেক্ষায় আছি।’

সবাই টিকা দেবে বলে, কিন্তু হাতে আসছে না

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের টিকার ঘাটতি পূরণের জন্য বিভিন্ন দেশের কাছে টিকা চেয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, সবাই টিকা দেবে বলে। কিন্তু হাতে আসছে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনেক অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আছে জেনে সঙ্গে সঙ্গে তাদের অনুরোধ জানালাম। পরে জানা গেল, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কম বলে যে দেশগুলোতে টিকা দেওয়া হবে, তার অগ্রাধিকারের তালিকায় বাংলাদেশ নেই। পরে অবশ্য আমরা জেনেছি আমাদের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেবে। এ ছাড়া কোভ্যাক্স থেকেও দেবে, তবে সেটা কবে তা বলেনি। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ আশাবাদী।’

এদিকে গুলশানে এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র কোভ্যাক্সের আওতায় বিভিন্ন দেশে যে টিকা দিচ্ছে, তাতে অগ্রাধিকারের তালিকায় আছে বাংলাদেশ। শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের উপহারের এ টিকা বাংলাদেশে আসবে।

আব্দুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি রিপোর্ট এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা হচ্ছে ২৫ মিলিয়ন। তারা টিকা সংগ্রহ করেছে ৯৩ দশমিক ৮ মিলিয়ন। আমরা তাদের কাছে চেয়েছি। আমরা তাদের টিকা দেওয়ার জন্য বলেছি। তারা বলেছে দেবে। সবাই বলে দেবে। কিন্তু হাতে আসছে না।’

আ.লীগকে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির উপহার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চিকিৎসাসামগ্রী দিচ্ছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। ১৩ জুন এ চিকিৎসাসামগ্রী বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমানে ঢাকায় আনা হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের কাছে ওষুধ হস্তান্তর অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ তথ্য জানান।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীনের উপহারের ছয় লাখ ডোজ টিকা আনতে দুটি সি-১৩০ প্লেন পাঠানো হচ্ছে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি আওয়ামী লীগকে বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল ইকুইপমেন্ট দিচ্ছে। টিকা নেওয়ার পর প্লেনে যত জায়গা থাকবে, সেটি পুরোটা ভরে নিয়ে আসবে।

চীন গত ১২ মে সিনোফার্মের তৈরি পাঁচ লাখ উপহারের টিকা বাংলাদেশে পাঠায়। তার ৯ দিনের মাথায় চীন দ্বিতীয় দফায় টিকা উপহারের ঘোষণা দেয়।