দেশে করোনায় আরও ২০৪ জনের মৃত্যু
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল আটটা থেকে আজ শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় নতুন করে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৪৮৯ জনের। আগের দিনের তুলনায় করোনায় মৃত্যু বেড়েছে, তবে নতুন রোগী শনাক্ত বেশ কমেছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় আগের দিনের চেয়ে নমুনা পরীক্ষাও অনেক কম হয়েছে।
আজ শনিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু হয়েছিল ১৮৭ জনের। ওই সময় করোনা শনাক্ত হয়েছিল ১২ হাজার ১৪৮ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৯ হাজার ২১৪ জনের। আগের দিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৪১ হাজার ৯৪৭। অর্থাৎ আগের দিনের চেয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা কম হয়েছে ১২ হাজার ৭৩৩টি। সেখানে রোগী শনাক্তও কম হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৯ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ০৬ শতাংশ। আগের দিন এই হার ছিল ২৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ।
সব মিলিয়ে দেশে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৯২ হাজার ৪১১ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৭ হাজার ৬৬৯ জনের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ২৩ হাজার ১৬৩ জন। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৮২০ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৪৯ জনের। চট্টগ্রাম বিভাগে মারা গেছেন ৩২ জন, রাজশাহীতে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়। কয়েক মাসের মধ্যে এই ভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও মাসখানেকের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। দেশে করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ এবং করোনায় মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে।
সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছে। এখন আবার মার্কেট, শপিং মল ও দোকানপাট খুলেছে। চলছে গণপরিবহনও।
এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে কোভিড–১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। তারা বলেছে, দেশে যখন করোনা সংক্রমণ ও এতে মৃত্যু সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে সেই সময় বিধিনিষেধ শিথিল করায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।
এদিকে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে যেসব দেশে, সেই তালিকায় দ্বাদশ অবস্থানে চলে এসেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে করোনায় মৃত্যুর দিক দিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। গত এক সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বিবেচনায় নিয়ে এই তালিকা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বে মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৮ কোটি ৮৬ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ৪০ লাখ ৬৭ হাজার ৫১৭ জনের। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। মৃত্যুর তালিকায় ব্রাজিল দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলেও রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে দেশটির অবস্থান তৃতীয়। আর রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় এবং মৃত্যুর দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত।
শুক্রবার দেওয়া তথ্যে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত হয়েছে ব্রাজিলে। দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ৫৭ হাজার ৭৩৬ জন এবং মৃত্যু হয়েছে এক হাজার ৫৫৬ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু ও রোগী শনাক্ত হয়েছে ইন্দোনিশয়ায় ৫৪ হাজার। আর মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ২০৫ জনের। এই সময় তৃতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে রাশিয়ায় ৭৯৯ জনের। দেশটিতে রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৫ হাজার ৭০৪ জন। রোগী শনাক্তের দিক দিয়ে তারা রয়েছে ষষ্ঠ অবস্থানে। শনাক্তের দিক দিয়ে তৃতীয় অবস্থানে ভারত। সবশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ হাজার ৬৪৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এ সময় দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে ৫৪২ জনের।