দেশে টিকা তৈরিতে সক্ষম ফার্মাসিউটিক্যালসগুলো কে কত নম্বর পেল

রাশিয়ার তৈরি করোনার টিকা স্পুতনিক-ভি
ফাইল ছবি।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকাকেই কার্যকর উপায় বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা। বেশিসংখ্যক মানুষকে টিকার আওতায় আনার মাধ্যমে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করার ভাবনা বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের ছিল। কিন্তু ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দেওয়ায় দেশে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে নতুন করে কাউকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না। নিবন্ধনও বন্ধ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া অব্যাহত থাকলেও অন্তত ১৪ লাখ মানুষের তা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।

এ অবস্থায় রাশিয়ার স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশে উৎপাদনের কথা ভাবা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠান টিকা উৎপাদনে আগ্রহও দেখিয়েছে। রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি ও চীনের সিনোফার্মের টিকা বাংলাদেশেই উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কোর কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তিনটি প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা যাচাই করেছে। তারা নম্বর দিয়ে কোন প্রতিষ্ঠানের অবস্থান কেমন, সে সম্পর্কে জানিয়েছে।

কোর কমিটি ২৫-এর মধ্যে নম্বর দিয়েছে। এতে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ২৫ নম্বরের মধ্যে পেয়েছে ২১। আর পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস পেয়েছে ১২, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস পেয়েছে ৫ নম্বর।

অবশ্য ভালো নম্বর পেলেও ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস রাশিয়ার টিকা স্পুতনিক-ভি নয়, শুধু চীনের সিনোফার্মের কোভিড-১৯ টিকা মাস্টার সিড থেকে উৎপাদন করতে পারবে বলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত কোর কমিটিকে জানিয়েছেন। কোর কমিটি ইনসেপ্টাকে বিষয়টি লিখিত আকারে জানাতে বলেছে।

কোর কমিটির বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, তারা মোট পাঁচটি ক্ষেত্রে সক্ষমতা যাচাই করেছে। এর মধ্যে বাল্ক থেকে ফিল ফিনিশ করে টিকা তৈরির সক্ষমতা ও মাস্টার সিড থেকে টিকা তৈরির সক্ষমতায় ৫ নম্বরের মধ্যে ইনসেপ্টা পেয়েছে ৪, পপুলার ৩, হেলথ কেয়ার ২। মাসে কী পরিমাণ টিকা উৎপাদনে সক্ষম—এ ক্ষেত্রে ৫ নম্বরের মধ্যে ইনসেপ্টা ৫–এ ৫ পেয়েছে, পপুলার ৩ ও হেলথ কেয়ার পেয়েছে ১ নম্বর।

টেস্টিংয়ে ৫ নম্বরের মধ্যে ইনসেপ্টা ৪, পপুলার ২ ও হেলথ কেয়ার ১ নম্বর পেয়েছে। জনবল ও অবকাঠামোয় ৫–এর মধ্যে মধ্যে ইনসেপ্টা ৪, পপুলার ২ ও হেলথ কেয়ার ২ নম্বর পেয়েছে। টিকা তৈরির অভিজ্ঞতা এবং রেজিস্টার্ড টিকার সংখ্যা, এ ক্ষেত্রে ৫ নম্বরের মধ্য ইনসেপ্টা ৪, পপুলার ২ ও হেলথ কেয়ার শূন্য নম্বর পেয়েছে ।

চীনের সিনোফার্মের টিকা।
টুইটার ফাইল ছবি।

কোর কমিটি তাদের সিদ্ধান্ত ও নম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠিয়েছে। কার্যপত্রে স্বাক্ষর করেছেন ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাহবুবুর রহমান।

এর আগে স্বাস্থ্যসেবাসচিবের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত কোর কমিটির সঙ্গে পরামর্শক কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইনসেপ্টা, পপুলার ও হেলথ কেয়ার—তিনটি কোম্পানির উৎপাদন সক্ষমতার নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন করে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও কোর কমিটিকে চূড়ান্ত সুপারিশ পাঠাতে বলা হয়েছে।

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, যদি রাশিয়া টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তর করে, তবে এক থেকে দেড় মাসের মধ্যেই ওই দুই কোম্পানি উৎপাদনে যেতে পারবে।

গত ১৩ এপ্রিল ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে টিকা উৎপাদন করতে পারে—এমন তিন প্রতিষ্ঠানের নাম পাঠান। তখন তিনি বলেছিলেন, স্পুতনিক-ভি উৎপাদনের জন্য অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা রয়েছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের।

এদিকে রাশিয়া থেকে স্পুতনিক-ভি টিকা কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে পাঠানো সরবরাহ চুক্তির খসড়ায় বেশ কিছু অস্পষ্টতা ও অসংগতি পেয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। চূড়ান্ত চুক্তি সই করার আগে এসব অস্পষ্টতা ও অসংগতি দূর করার পরামর্শ দিয়েছে তারা। এরপরই টিকা কেনার পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে বলেছে আইন মন্ত্রণালয়। ৬ মে আইন মন্ত্রণালয় খসড়া চুক্তির বিষয়ে তাদের মতামত স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে পাঠিয়েছে। এতে মোট ২৯টি বিষয় নিশ্চিত হতে বলা হয়েছে। সরবরাহ চুক্তির বিষয়বস্তু নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন মত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।