ভারতের চেয়ে দেশে মৃত্যুর হার বেশি

টানা চার দিন পর দেশে দৈনিক শনাক্তের সংখ্যা আবার ১১ হাজার ছাড়াল। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরও ২২৮ জনের মৃত্যু।

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণে মৃত্যুর হার বাড়ছে। এখন মৃত্যুর হারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয়। প্রতিবেশী ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে করোনায় মৃত্যুর হার বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রোববার পর্যন্ত মোট শনাক্তের সংখ্যা বিবেচনায় দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। গত মার্চ থেকে দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। এর আগে ১ মার্চ পর্যন্ত দেশে করোনায় মৃত্যুর হার ছিল ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। মার্চের পর মৃত্যুর হার বাড়তে থাকে।

গত মে মাসে ঈদুল ফিতরের পর থেকে দেশে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে। জুন মাস থেকে অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে থাকে।

এখন পর্যন্ত করোনায় বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভারতে। মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকে বৈশ্বিক তালিকায় ভারতের অবস্থান তৃতীয়। দেশটিতে চার লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ, দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পাকিস্তানে মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৩ শতাংশ। মৃত্যুর হারের দিক থেকে এই অঞ্চলে তৃতীয় বাংলাদেশ। করোনায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভুটান এখন পর্যন্ত অনেকটাই নিরাপদ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে করোনায় মাত্র দুজনের মৃত্যু হয়েছে (২০ জুলাই পর্যন্ত হিসাব)। এখন পর্যন্ত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ জনের।

চার দিন পর আবারও মৃত্যু দুই শতাধিক

দেশে ৯ জুলাই থেকে ২০ জুলাই পর্যন্ত দুদিন ছাড়া প্রতিদিনই মৃত্যু ছিল দুই শতাধিক। ২১ জুলাই থেকে টানা চার দিন দৈনিক মৃত্যু ২০০–এর নিচে ছিল। গতকাল সেটি আবার ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ২২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট ১৯ হাজার ২৭৪ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

ঈদুল আজহার ছুটির কারণে করোনার সংক্রমণ শনাক্তের পরীক্ষা কম হওয়ায় গত চার দিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কম ছিল। পরীক্ষা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন রোগীও বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৩৭ হাজার ৫৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ২৯১ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। টানা চার দিন পর দৈনিক শনাক্ত আবার ১১ হাজার ছাড়াল। গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১১ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৫ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৯২৩ জন।

গত মে মাস থেকে দেশে করোনার ডেলটা ধরন (ভারতে উৎপত্তি) সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। গ্রামগঞ্জেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। গত বছরের মার্চে সংক্রমণের একেবারে শুরু থেকে রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকা বিভাগে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি ছিল। এখনো সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি ঢাকায়। তবে গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে মৃত্যু দ্রুত বাড়তে থাকে। রাজশাহীতে মৃত্যু কিছুটা কমে এলেও খুলনায় পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না।

জেলাওয়ারি হিসাবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ৬ হাজার ২০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকায় (মহানগরসহ)। তবে এখানে মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম—১ দশমিক ০৩ শতাংশ। গতকাল পর্যন্ত দেশে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি চাঁদপুরে—৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধের তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব এখনো দেখা যায়নি। মাঝখানে আট দিন বিধিনিষেধ শিথিল ছিল। গত শুক্রবার (২৩ জুলাই) থেকে আবারও দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ শুরু হয়েছে। তবে এখনো নতুন রোগী বেড়ে চলেছে। ঢাকার বাইরে জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে।

গতকাল এক অনলাইন বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম বলেন, কোরবানির ঈদের ছুটির কারণে কিছুদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কম ছিল। পরীক্ষার সংখ্যা বাড়লে শনাক্তের সংখ্যাও বাড়বে। রোগী বাড়ায় জেলাগুলোতে শয্যাসংখ্যা কমে আসছে।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, বিধিনিষেধের পাশাপাশি গ্রাম, শহর—সব জায়গায় রোগী ব্যবস্থাপনা তথা আক্রান্ত ব্যক্তিদের আইসোলেশেন (বিচ্ছিন্ন রাখা), তাঁদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা, শতভাগ মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে পারে।