ভয় পাচ্ছ না তো, রুনুকে বললেন প্রধানমন্ত্রী

দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণ করেন নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা। বুধবার বিকেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: হাসান রাজা

‘ভয় পাচ্ছ না তো?’ জবাব, ‘না’। আজ বুধবার এই কথোপকথন হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা গ্রহণকারী নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তার মধ্যে। অবশ্য এরপর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে টিকা গ্রহণকারী অন্য চারজনের সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রীর এমন কথোপকথন হয়েছে।

আজ বুধবার বিকেল ৪টা ৮ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে রুনুকে টিকা দেওয়ার মাধ্যমে উদ্বোধন হয়েছে বাংলাদেশের করোনার টিকাদান কর্মসূচি। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। রুনুর পর যে চারজন টিকা নিয়েছেন তাঁদের মধ্যে একজন পুলিশ ও একজন সেনাসদস্য রয়েছেন।


রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে টিকার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। এতে দেখা গেছে, রুনু ভেরোনিকা কস্তা টিকা নিতে এলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ভয় পাচ্ছ না তো?’ রুনু মাথা নাড়িয়ে ও মুখে বললেন, ‘না’। এরপর তিনি টিকা নেন। টিকা নেওয়ার পর রুনুর উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুস্থ থাকো, ভালো থাকো’। প্রধানমন্ত্রীর এই কথা শেষে জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে টিকা নেওয়ার নির্ধারিত স্থান ত্যাগ করেন রুনু।

রুনু ভেরোনিকার পর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যথাক্রমে টিকা নেন ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা, পুলিশ সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরান হামিদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দ্বিতীয়জন হিসেবে টিকা নেন ডা. আহমেদ লুৎফুল মোবিন। বুধবার বিকেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে
ছবি: হাসান রাজা

আজ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশে আরও ২৫ জন টিকা নেবেন। এরপর আগামীকাল থেকে কুর্মিটোলার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে প্রথম সারির পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মীকে এ টিকা দেওয়া হবে।

আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি ৬৪ জেলায় ব্যাপকভিত্তিক টিকাদান শুরু হবে। করোনার টিকাদান কত দিন চলবে, তা এখনো কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি।
টিকার সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে।


উদ্বোধনের পর দেশের মানুষকে টিকা পেতে অনলাইনে নিবন্ধনের জন্য অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই, তাঁরাও টিকাদানকেন্দ্রে যোগাযোগ করে তালিকাভুক্ত হতে পারবেন।


করোনার টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করতে হবে ‘সুরক্ষা’ নামের ওয়েব পোর্টালে (www.surokkha.gov.bd)। অ্যান্ড্রয়েড বা অ্যাপল প্লে স্টোর থেকে সুরক্ষা মোবাইল অ্যাপ ডাউনলোড করেও করা যাবে নিবন্ধন।

দেশে সংক্রমণ পরিস্থিতি যখন অনেকটাই কমে এসেছে, তখন টিকা দেওয়া শুরু হলো। তবে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব এখনো করোনা মহামারি পরিস্থিতির মধ্যেই আছে। কোনো কোনো দেশে পুনরায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে। কিছু দেশে বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো দেশে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) বিস্তার দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের মানুষকে টিকার আওতায় আনা তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।

দেশের বেশির ভাগ মানুষ করোনার টিকা নিতে আগ্রহী। তবে বড় অংশ এখনই নয়, কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস অপেক্ষার পর টিকা নিতে চায়। করোনার টিকা নিয়ে মানুষের এই মনোভাব উঠে এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক জরিপে। এতে বলা হয়, ৮৪ শতাংশ মানুষ টিকা নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। এখনই পেলে টিকা নেবেন ৩২ শতাংশ, অপেক্ষার পর নিতে চান ৫২ শতাংশ, আর কখনোই টিকা নেবেন না ১৬ শতাংশ মানুষ। জরিপের এই ফলাফল গতকাল মঙ্গলবার এক ওয়েবিনারে প্রকাশ করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, টিকা প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষের জীবন রক্ষা করে। দেশের সব মানুষেরই টিকা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘করোনা প্রতিহত করার পরীক্ষিত বৈজ্ঞানিক অস্ত্র হচ্ছে টিকা। আমি নিঃসংকোচে এই টিকা নেব।’

বাংলাদেশ সরকার, বেক্সিমকো ফার্মা ও সেরাম ইনস্টিটিউটের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী সরকার তিন কোটি টিকা কিনছে সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে। বেক্সিমকো এই টিকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে। গত সোমবার এই টিকার প্রথম চালান দেশে আসে। প্রথম চালানে এসেছে ৫০ লাখ টিকা। এভাবে আরও পাঁচটি চালান আসার কথা। তার আগে গত বৃহস্পতিবার ভারতের উপহার হিসেবে দেশে ২০ লাখ টিকা আসে।